ঢাকা, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

সংবিধানে বড় পরিবর্তন: ভাঙতে চলেছে ঐতিহাসিক কাঠামো

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০৯ ১৬:২৫:০৬
সংবিধানে বড় পরিবর্তন: ভাঙতে চলেছে ঐতিহাসিক কাঠামো

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা ‘জাতির পিতা’ বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব করেছে, যা শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে অভিহিত করে। কমিশনের মতে, এটি ব্যক্তির বন্দনা এবং স্বৈরতন্ত্রের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে, কারণ বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং একক ব্যক্তির ‘জাতির পিতা’ হওয়া উচিত নয়। তারা আরো উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগণিত মানুষের অবদান ছিল, এবং সেই সামষ্টিক অবদানকে সম্মান জানানো উচিত।

কমিশন ফ্যাসিবাদের বীজ ১৯৭২ সালের সংবিধানে নিহিত থাকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, এর কারণে দেশে অগণতান্ত্রিক প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে ক্ষমতার পুঞ্জীভবন, আমলাতান্ত্রিকতা, বিচার বিভাগের দলীয়করণ, এবং দুর্নীতির সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।

এছাড়া, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিধান নিয়ে কমিশনের মন্তব্য ছিল অত্যন্ত সমালোচনামূলক। তারা বলেছে, এটি দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের আদর্শিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে তাদের বক্তব্য হলো, এটি ঐতিহাসিকভাবে অজ্ঞাত ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী রাজনৈতিক আলোচনাতেও এমন কোনো উল্লেখ ছিল না। সুতরাং, তারা ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রাখা নিয়ে তারা মতামত দিয়েছে এবং জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এটি অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে সুপারিশ করেছে।

কমিশন আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে, যেমন:

- একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এবং তার মেয়াদ হবে চার বছর।

- সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

- বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্য সব ভাষাকে প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

- আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ, এবং বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় অঙ্গগুলোর ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া নিয়ে কমিশন সতর্কতা প্রকাশ করেছে, এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ব্যাপক কেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, জনগণের গোপনীয়তার অধিকার, সমাবেশের স্বাধীনতা, এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করার জন্য কিছু নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে জনগণের মৌলিক অধিকার আরও শক্তিশালী হয়।

এমনকি, কমিশন ‘যন্ত্রণা কিংবা নিষ্ঠুর দণ্ড’ সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র অনুচ্ছেদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে, যা মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

এই সুপারিশগুলো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে