ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

পেনশনের জন্য ৪০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী শঙ্কায়

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০৯ ১৬:১০:৩৮
পেনশনের জন্য ৪০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী শঙ্কায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী তাদের পেনশনের টাকার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন, তবে এখনো তারা এর কোনো সুরাহা পাননি। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, রাজধানীর পলাশী এলাকার ব্যানবেইস ভবনে গিয়ে ভুক্তভোগী অনেক শিক্ষক-কর্মচারী তাদের দুর্ভোগের কথা জানাচ্ছেন। এই সমস্যার একাধিক শিকার ব্যক্তি, যেমন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন, যিনি ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি অবসরে গিয়েছিলেন, কিন্তু এখনও পেনশনের টাকা পাননি। তিনি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ২০ বার ব্যানবেইস ভবনে এসে খোঁজ নিয়েছেন, কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। তার মতো অনেকেই অবসরের পর পেনশনের জন্য নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তেমনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বীররামপুর জান্নাতুল উলুম আলিম মাদরাসার সহকারী শিক্ষক কারি নূর মোহাম্মদও তিন বছর আগে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তার পেনশন পরিশোধ হয়নি।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশনের জন্য ৪০ হাজার আবেদন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে জমা আছে, এবং কল্যাণ ট্রাস্টে আরও ৩৯ হাজার আবেদন রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক আবেদনের সমাধান করতে সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাব রয়েছে। অবসর সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতে, এসব আবেদনের জন্য প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বাজেটে এই অর্থের কোনো বরাদ্দ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন জরুরি বরাদ্দ না পেলে এই সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়।

অবসর সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রতি মাসে ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টে ৪ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হয়, তবে এই টাকা দিয়ে পুরো পেনশন পরিশোধ করা সম্ভব নয়। অবসর সুবিধা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, তাদের মাসিক আয় ৭৩ কোটি টাকা, কিন্তু প্রতি মাসে যে পরিমাণ পেনশন পরিশোধ করা প্রয়োজন, তা ১২০ কোটি টাকা। ফলে প্রতি মাসে ৪৭ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, যার কারণে ৪ বছরের বেশি সময় ধরে আবেদন জমে যাচ্ছে। একইভাবে কল্যাণ ট্রাস্টের আয় ৫২ কোটি টাকা, কিন্তু তাদের প্রতি মাসে ৬৫-৭০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এর ফলে মাসে মাসে ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ মন্তব্য করেন যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য জমানো ৬ হাজার কোটি টাকা যে ব্যাংকে রাখা হয়েছিল, সেটি দেউলিয়া হওয়ায় শিক্ষকদের সঞ্চয়ের কোনো টাকা এখন আর নেই। তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, উপদেষ্টার মন্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই।

এই দুটি সংস্থা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন পরিশোধের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থেরও সংকট রয়েছে। ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের মাধ্যমে কোন অর্থ ছাড় দেওয়া হবে না বলে সরকার সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্টে জমা থাকা টাকাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি, গত এক বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হলেও সে টাকাও শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন হিসেবে বিতরণ করা হয়নি।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশনের জন্য আলাদা দুটি সংস্থা কাজ করছে: বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাস্ট। শিক্ষকদের মূল বেতন থেকে কেটে নেওয়া ৬ শতাংশ অর্থ থেকে প্রতি মাসে মোট ৭৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়, যা ১২০ কোটি টাকা প্রয়োজনীয় পেনশন পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নয়। একইভাবে কল্যাণ ট্রাস্টের সংগ্রহ ৫২ কোটি টাকা হলেও মাসিক প্রয়োজনীয় ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।

অতএব, এই সংকটের সমাধান নির্ভর করছে এককালীন জরুরি বরাদ্দের উপর, যা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে