ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

এক বছরে ৫৪টি সভা

স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড খরচের এক-তৃতীয়াংশই বোর্ড সভার সম্মানী

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৫ ২১:১৭:৩৩
স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড খরচের এক-তৃতীয়াংশই বোর্ড সভার সম্মানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারকে আর্থিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবিতরণকৃত ডিভিডেন্ডের অর্থ দিয়ে কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল

প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরের পাশাপাশি, প্রায় অর্ধডজন কমিটি গঠন করা হয়।

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এসব কমিটির অন্তত ৫৪টি সভা করা হয়। এসব সভায় কমিটির সদস্যদের সম্মানী ও বিভিন্ন সভা আয়োজনে মোট দুই কোটি ১২ লাখ টাকা খরচ করে সিএমএসএফ। যা তাদের মোট পরিচালন খরচের এক-তৃতীয়াংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরে তারা সম্মানী ও অনুষ্ঠান বাবদ খরচ করেছিলেন এক কোটি ১৯ লাখ টাকা। মোট পরিচালন খরচ ছিল দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সিএমএসএফ বোর্ড এক হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার তহবিল পেয়েছে, এই টাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অবণ্টিত ডিভিডেন্ড হিসেবে জমা ছিল।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নেওয়ার পর সিএমএসএফ পরিচালনার দায়িত্ব পান। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকতা ও সংশ্লিষ্টদের সভা-কার্যক্রমের ন্যুনতম কোনো ফলাফল দেখা যায়নি শেয়ারবাজারে।

বিষয়টি আমলে নিয়ে এত সভার যৌক্তিকতা ও পরবর্তী খরচ মূল্যায়নের জন্য তদন্ত করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি কর্তৃক সিএমএসএফ’র যে তহবিল গঠন করা হয়, তহবিলের সেই অর্থ ও শেয়ার যেকোনো সময় বিনিয়োগকারীরা চাইলে তা ফেরত দিতে হবে। আর ফেরত তারা চাওয়ার আগ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ তহবিল ব্যবহার করা হবে। তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ কেনা-বেচা, অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তা করা যেতে পারে।

নজিবুর রহমান তহবিলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১১ সদস্যের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত মাসে তার তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বোর্ড ও বিভিন্ন কমিটি অন্তত ৫৪টি সভা করেছে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সম্মানী বাবদ খরচ এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং অনুষ্ঠানের জন্য করা করা হয় ৬৫ লাখ টাকা। তহবিলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৬৫ কোটি টাকা দুই হাজার ৭০০ বিনিয়োগকারীকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি, এ তহবিল থেকে ৫০ কোটি টাকা স্পন্সরশিপে আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলী মিউচ্যুয়াল ফান্ড চালু করা হয়। বাকি ২২৫ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা হয়।

এ ছাড়া, এ তহবিল থেকে কয়েকটি বাজার মধ্যস্থতাকারীকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

একটি ব্যাংকে ৩৪৮ কোটি টাকা রাখার পাশাপাশি বাকি টাকা স্টক ডিভিডেন্ড হিসেবে তহবিলটির বিও অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।

এক বছরের ব্যবধানে ৫৪টি সভার বিষয়ে সিএমএসএফের চিফ অব অপারেশন মো. মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তহবিলটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় কর্মকর্তাদের অনেক সভা করতে হয়েছিল। এখন এটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। সিএমএসএফ সঠিক বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অবিতরণকৃত ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের তহবিল যাতে কোনভাবেই কমে না যায় সে ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেষ্ট।’

যে খরচ করা হয়েছে, তা মূল টাকা থেকে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সুদ থেকে সব খরচ হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমএসএফ পরিচালনা পর্ষদের দুই সদস্য জানান, বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাসঙ্গিক প্রায় সব সিদ্ধান্ত সিএমএসএফ চেয়ারম্যান নিয়েছেন। সভা বাবদ খরচ ও সম্মানী ভাতার নামে যেসব খরচ করা হয়েছে সেটি এক ধরনের অপচয়। তারা আগেই কমিটি ও সভার সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা কয়েকবার বিষয়টি তাদেরকে জানিয়েছে, পরবর্তীতে তদন্তও করেছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে বিএসইসি শিগগিরই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। বিষয়টি এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানো হবে।’

তারিক/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে