ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

সৌদিতে নেয়ার জন্য ১৮ যুবকের অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা

২০২৪ মে ১৮ ২৩:৫৬:২৬
সৌদিতে নেয়ার জন্য ১৮ যুবকের অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : কয়েক জেলার ১৮ যুবককে সৌদি আরবে নেয়ার কথা বলে ৬৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে প্রতারকরা। প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে তাদের সৌদি যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে ওই ১৮ যুবক গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসছে।

আগামীকাল রোববার তারা বিএমইটির কাছে অভিযোগ জানাবে। ওই ১৮ যুবককে সৌদি আরবে পাঠিয়ে ৬৩ লাখ টাকা চুরি করেছে প্রতারকরা। এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই নোয়াখালী ও ফেনী জেলার বাসিন্দা। এছাড়াও টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বাড়ি। ভুক্তভোগীরা জানান, গত ৯ মে সকাল সাড়ে ৮টায় আমাদের সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। সেই উদ্দেশ্যে ভিক্টোরি হোটেল, নয়াপল্টন, ঢাকায় উত্তরবঙ্গ ওভারসিজ লিমিটেডের অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারি আমাদের ভিসা ও টিকিট এখনো হয়নি।

একথা শোনার পর ভুক্তভোগীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। ভিসা ও টিকিট কেন হয়নি জানতে চাইলে এজেন্সি মালিকপাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট না দিয়ে উল্টো বেঁধে রাখার ভয় দেখান।

এরপর তাদেরকে ফের সৌদিতে পাঠাবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু ঘটনার পরের দিনেও তাদের পাঠাতে পারেননি। পরে তারা গ্রামে ফিরে যান। অভিযুক্তরা হলেন উত্তরবঙ্গ ওভারসিজ লিমিটেড ও ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল নামে দুই এজেন্সির মালিক হাসিবুল ইসলাম বাবু নামে এক ব্যক্তি। তাদের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়।

এই প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মো. দেশ মানবরামকে শাকিল মিয়া বলেন, ‘লোনে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ওই এজেন্সিকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে। তাই ঢাকায় যাচ্ছি, আগামীকাল তাদের বিরুদ্ধে বিএমইটিতে অভিযোগ দায়ের করা হবে।’

কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশি কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

আরেক ভুক্তভোগী ফেনীর ইয়াসিন আরাফাত জানান, এনজিও ও অন্যদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান হাসিবুলের অ্যাকাউন্টে। এছাড়াও তার মেডিকেল ও বিএমইটি কার্ড তৈরিতেও টাকা নেওয়া হয়।

এছাড়াও আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় দুই হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল, এটা তাদের বিশেষ সার্ভিস। প্রতারক চক্র আমাদের ১৮ জনের কাছ থেকে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই প্রতারক চক্রের সাথে উত্তরবঙ্গ ওভারসিজের মালিক হাসিবুল ইসলাম বাবুও জড়িত। তার কথা মতোই শাহাবুদ্দিন, আবু সাঈদ ও ফজলু কাজী টাকাগুলো তাদের কাছ থেকে নেয়। তারা ৬৩ লাখ টাকার মধ্যে ভিসা, মেডিকেল বাবাদ অর্ধেকের বেশি টাকা বাবুর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন। যা ব্যাংক ও বিকাশে লেনদেন হয়েছে।

জানা গেছে, ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল ও উত্তরবঙ্গ ওভারসিজ লিমিটেড নামে দুই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হাসিবুল ইসলাম বাবু ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ভিসা দেয়ার নামে কয়েক দফায় টাকা নিয়েছেন। কখনো নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, আবার কখনো বন্ধুর অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়েছেন।

অনেক সময় তাদের কাছ থেকে টাকা বিকাশেও নিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ভিসা বাবদ টাকা ছাড়াও মেডিকেল ও বিএমইটি কার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছে।

অথচ হাসিবুল ইসলাম বাবুর দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটিরই আরএল নম্বর নেই। এরপরও আপনি কিভাবে লোক পাঠাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ভিসা বিক্রি করেছি মাত্র। এটা তো অবৈধ নয়।

তবে তিনি বাড়তি মেডিকেল ফি ও বিএমএটি কার্ডের জন্য ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন।

তার দাবি, তিনি সাতজনের কাছ থেকে ২০ হাজার করে মেডিকেল ফি বাবদ এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা পেয়েছেন। তার মতে, তিনি মাত্র ১০ জনের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন।

উত্তরবঙ্গ ওভারসিজ লিমিটেড মালিক হাসিবুল ইসলাম বাবু বলেন, আমি তাদের ১০ জানের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮০ টাকা পেয়েছি। সাতজনের মেডিকেল করা বাবদ ২০ হাজার করে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছি।

এছাড়া আর কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হয়নি। ফ্লাইটের দিন তারা আসছে সকালে। আমি তাদের বলেছিলাম টাকা দিলে ফ্লাইট হবে, না দিলে হবে না।

তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার মূল হচ্ছে আবু সাইদ। তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার সহযোগী সাহাবুদ্দিন। আর ফজলু কাজী তার হয়ে লোকজন সংগ্রহের কাজ করেছে।

মূলত সাহাবুদ্দিন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সব টাকা নিয়ে আবু সাঈদকে দেন। আবু সাঈদ তা সৌদিতে থাকা ফজলু কাজীকে দেন। সেখান থেকে পাওয়া ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফজলু কথিত এজেন্সির মালিক হাসিবুর রহমান বাবুকে দেন।

শেয়ারনিউজ, ১৮ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে