ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

মালয়েশিয়ায় বাইরে ঝুম বৃষ্টি, ভেতরে বৈশাখী উল্লাস

২০২৪ মে ১৩ ১৯:১৯:১১
মালয়েশিয়ায় বাইরে ঝুম বৃষ্টি, ভেতরে বৈশাখী উল্লাস

প্রবাস ডেস্ক : বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, ভেতরে তুমুল প্রবাসীদের আনন্দ-উল্লাস। নাচ-গানের মধ্য দিয়েই বাংলা নববর্ষ উদযাপন। বৈশাখের শেষের দিকে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হযল জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

রাজধানী কুয়ালালামপুরের ক্রাফট কালচারাল কমপ্লেক্সে গত শনিবার (১১ মে) ‘বৈশাখী উল্লাস ১৪৩১’ শিরোনামে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিডি এলিট ক্লাব মালয়েশিয়া।

বাংলাদেশি তরুণদের এই সংগঠনটি প্রথমবারের মতো নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কুয়ালালামপুরের ক্রাফট কালচারাল সেন্টার একটি চমৎকার সাংস্কৃতিক স্থান। পুরো হল প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নাচে–গানে মাতায় প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। পরে মঞ্চে আসেন অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তিনি মঞ্চে অভিনয়ে নয়, তাঁর দ্বিতীয়-প্রতিভা ‘সংগীত’ দিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের।

ফজলুর রহমান বাবুর সেই বিখ্যাত গান ‘নিথুয়া পাথা রে’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান শুনিয়ে ও চমৎকার কিছু বার্তা দিয়ে মঞ্চ ছাড়েন তিনি। পরে দর্শক সারিতে অতিথিতের সঙ্গে বসে আলোকিত করে রাখেন পুরো হল।

এরপর মঞ্চে আসেন বিখ্যাত বাউলশিল্পী শফি মণ্ডল। শুভ্র পোশাকে ৭২ বছর বয়সী শফি মণ্ডল যখন মঞ্চে এলেন পুরো হলে যেন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে। তাঁর পোশাকের ভিন্নতায়ও কিছুটা বিমোহিত হয়েছেন দর্শক।

দেশে বাউলদের সামনাসামনি দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিদেশের মাটিতে এমন দেশের এমন মানুষদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। প্রবীণ এই শিল্পী সাদা কাপড়েও দারুণ স্মার্ট। যেন কুষ্টিয়ায় বাউন নন, তিনি আধুনিক শহরের বাউল। বাউল গান আর সুফি গানে তিনি মুগ্ধ করেন প্রবাসীদের।

প্রবাসে কী পরিমাণ বাউল সংগীতের ভক্ত আছেন, তা বোঝা গেল অনুষ্ঠানের বিশাল উপস্থিতি দেখে। সবাই যেন বাউল শফি মণ্ডল ও বাউল লায়লার ভক্ত। মেরির ভক্তও কম না। ফজলুর রহমান বাবু ও পাভেল তো আছেনই।

শফি মণ্ডলের বাউল, মরমি ও সুফি সংগীত পরিবেশন শেষে আবারো শিক্ষার্থীদের নাচ গান আর হৈচৈ, উল্লাসের ধোঁয়া ছাড়ার পরক্ষণেই মঞ্চে প্রবেশ করেন মীরাক্কেলখ্যাত সাইদুর রহমান পাভেল।

কমেডিয়ান পাভেল তাঁর কথায় কথায় দর্শকদের বিনোদন দিয়ে ডাকলেন কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা মেরিকে। চট্টগ্রামের মেয়ে মেরি গানে গানে মাতিয়ে তুলেন পুরো হল। মঞ্চে মেরির আগমনে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে তরুণ দর্শকরা।

জাকিয়া সুলতানা মেরি চট্টগ্রামের জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান ‘সোনা বন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা’, ‘ও রে সাম্পানওয়ালা’ সহ অনেকগুলো গান গেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাচে-উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে মাতিয়েছেন।

বলা যায়, কুয়ালালামপুরে গত দুই যুগে যত বাংলাদেশি শিল্পী এসে গান গেয়েছেন প্রবাসী দর্শক-শ্রোতাদের এতো আনন্দ করতে এর আগে দেখা যায়নি। এক মেরি-ই যতটা নাচিয়েছেন প্রবাসী দর্শক-শ্রোতাদের।

সবশেষে মধ্যরাত পর্যন্ত গান শোনান কণ্ঠশিল্পী সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা। তিনি প্রথমে স্মরণ করেন সদ্যপ্রয়াত বাউলশিল্পী পাগল হাসানকে। লায়লাও গানে গানে প্রবাসীদের ভীষণ মাতিয়ে রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিকেলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। রাতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ।

বিডি এলিট ক্লাবের সদস্যদের উদ্যোগে আয়োজিত বাংলা নববর্ষ বরণের এই চমৎকার অনুষ্ঠানটি বিডি এলিট ক্লাবের সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। প্রবাসী দর্শক-শ্রেতাদের জন্য অনুষ্ঠানে কোনো প্রবেশ ফি ছিল না।

ফলে আগ্রহী প্রবাসীরা এসেছেন, গান শুনেছেন, উপভোগ করেছেন বৈশাখী উৎসব। অনুষ্ঠানস্থলে অনেক বাংলাদেশি স্টলে বাংলাদেশি খাবার বিক্রি হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বৈশাখী মেলাও ছিল উপভোগ্য। গানের মাঝে দেশীয় খাবারের স্বাদ নেন আগত প্রবাসীরা।

সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা দারুণ এক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এটি ছিল অনেক অনুষ্ঠানের ভিড়ে একটি সুরেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিডি এলিট ক্লাবের সদস্যরা প্রতিবছর এমন আয়োজন করবে- এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন অনুষ্ঠানে আগত প্রবাসীরা।

শেয়ারনিউজ, ১৩ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে