ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

যেভাবে ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়

২০২৫ আগস্ট ১৯ ১১:১৫:০৫
যেভাবে ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে কেন্দ্র করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গুম ও হত্যার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলা হয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনা ছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং অনুসন্ধানী তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযোগগুলো যাচাই করা হয়েছে।

জিয়াউল আহসানকে একজন "নৃশংস হত্যাকারী" হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের সময় তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমে জড়িত ছিলেন।সরকার পতনের পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং পরবর্তীতে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন।

জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পর জিয়াউল আহসান আদালতে দাবি করেন, তাকে ৭ আগস্ট থেকে একটি গোপন আটককেন্দ্রে (‘আয়নাঘর’) বন্দি রাখা হয়েছিল। এই ‘আয়নাঘর’ নিয়ে আগে থেকেই মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল।

বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুম ও হত্যার অভিযোগটি অন্যতম প্রধান বিষয়।২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী থেকে ইলিয়াস আলী ও তার চালক আনসার আলী নিখোঁজ হন। তাদের গাড়িটি উদ্ধার হলেও আজ পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলেনি।বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, এ ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভূমিকা রয়েছে।

একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সুইডেনভিত্তিক অনুসন্ধানী প্ল্যাটফর্ম নেত্র নিউজ ফাঁস হওয়া কিছু নথির বরাতে দাবি করেছে, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল।র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও এই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করা হয়।

আরও এক অনুসন্ধানে, দাবি করা হয় যে, জিয়াউল আহসান নেতৃত্বাধীন একটি র‌্যাব টিম ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকূল দিয়ে সাগরে মরদেহ ফেলে দেয়।

ইলিয়াস আলীর গুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে নির্দেশ দিয়েছিলেন।সরকার পতনের পর গঠিত ‘বলপূর্বক অন্তর্ধান তদন্ত কমিশন’ জানিয়েছে, তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এবং জিয়াউল আহসানসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

কমিশনের মতে, এ গুমগুলো “পদ্ধতিগত ও পরিকল্পিত” ছিল। তাদের ধারণা, শেখ হাসিনার শাসনামলে বলপূর্বক গুমের সংখ্যা ৩,৫০০ ছাড়িয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে গুম-হত্যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছিলেন:“যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।”তবে আন্তর্জাতিক মহলে সেই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয়নি।

ইলিয়াস আলী হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।তবে, এই দাবির কোনো সরকারি বা ট্রাইব্যুনাল ভিত্তিক প্রমাণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

তবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। অভিযোগগুলো এখনো বিচারাধীন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।

তবে, বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নজর বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের মানবাধিকার চিত্র, বিচারপ্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে