ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

রেমিট্যান্সে জনশক্তি রপ্তানির প্রতিফলন নেই

২০২৪ মে ০৩ ০৯:৪৪:৪৯
রেমিট্যান্সে জনশক্তি রপ্তানির প্রতিফলন নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অন্যতম উৎস। কোভিড মহামারীর পর দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক হারে জনশক্তি রপ্তানি হলেও রেমিট্যান্সে তা কোনোভাবেই প্রতিফলিত হচ্ছে না। চাপের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যাংকগুলোকে বেশি হারে রেমিটেন্স কেনার পরামর্শ দিলেও টাকার প্রবাহ বাড়াতে পারেননি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অবৈধ অর্থ উপার্জনকারীরা এ দেশ থেকে অর্থ পাচারে হুন্ডিকে ব্যবহার করছে। আর এ হুন্ডিই গিলে নিচ্ছে দেশের অধিকাংশ রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী এপ্রিল মাসে বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা ২০৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার সমান ১১০ টাকা ধরে)। এ মাসে দৈনিক গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ৭৪৮ কোটি টাকা। যদিও রেমিট্যান্সে তথ্য নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্য বলছে, সাধারণত ঈদের আগে পরিবারের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে রেমিট্যান্স বেশি পাঠান প্রবাসীরা। সেক্ষেত্রে ঈদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমে। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিলে বিষয়টি ঘটেছে পুরো উল্টো। ঈদের আগে এপ্রিলের প্রথম ১২ দিন মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। প্রতিদিন রেমিট্যান্স এসেছে গড়ে ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এরপর ১৩ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত ১৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। কিন্তু এপ্রিলের শেষ চার দিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫ লাখ ডলার। আর শুধু শেষ দিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ডলারের বেশি। মাসের শেষে হঠাৎ করে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৭ জন। আর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য গেছেন।

কিন্তু সেই অনুপাতে দেশের প্রবাসী আয় বাড়েনি। বর্তমানে সবমিলিয়ে দেশের বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখ ২ হাজার ৩৬০ জন। এ হিসাবে গড়ে একজন প্রবাসী গত এপ্রিলে ১২৫ ডলার বা ১৩ হাজার ৭৬৫ টাকা করে দেশে পাঠিয়েছেন।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম কম থাকায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছেন। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশের বিদেশি মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স।

বায়রা ও অন্যান্য সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা কমপক্ষে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকার নিচে পাঠানোর কথা নয়। গড় হিসাব করলে তা ২৫ হাজার টাকার উপরে হওয়ার কথা। কিন্তু তথ্য অনুযায়ী তা ১৩-১৪ হাজার টাকা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। হুন্ডি বা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বন্ধ করা গেলে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ হাজার টাকার বেশি। সে হিসাবে এপ্রিলেও গড়ে প্রবাসীদের মাথাপিছু ১০ হাজার টাকার বেশি হুন্ডি হয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিএমইটি জনশক্তি রপ্তানির যেই তথ্য দিয়েছে, সেটি সঠিক নয়। এটা ১ কোটি ৩০ লাখের মতো হতে পারে।

তবে এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের বৈধপথে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তার সমপরিমাণ থেকেও অনেক বেশি হুন্ডি বা অন্যান্য মাধ্যমে আসে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রেমিট্যান্স কম দেখা যাচ্ছে। তবে যেভাবেই আসুক না কেন, এটা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পরিস্থিতি সম্পর্কে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, অর্থ পাচারের কারণে দেশের রেমিট্যান্স কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। মধ্যপ্রাচ্য থেকেই অর্থ পাচারকারীরা রেমিট্যান্সের ডলার কিনে নিচ্ছে। আর বাংলাদেশে তা টাকায় পরিশোধ করছে। তাই রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে হুন্ডির তৎপরতা থামাতে হবে।

এছাড়া আমাদের এখান থেকে যেসব জনশক্তি যায়, তাদের অধিকাংশই অদক্ষ। এজন্য তারা বিদেশে গিয়ে সেভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারে না। তবে আমাদের রেমিট্যান্সের যে হার, অর্থ পাচার থামানো গেলে তা অন্তত দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এপ্রিলে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, শরীয়াহভিত্তিক আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে।

তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯১২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৭৭২ কোটি মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।

এদিকে, রেমিট্যান্সের উত্থান-পতনের কারণে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও কমছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার বা ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ডলার বা ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের এই সময়ে মোট রিজার্ভের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল (৩০ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১১৮ কোটি ডলার)। যদিও দেশের ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ মাত্র ১৪ বিলিয়নের সমান্য বেশি।

শেয়ারনিউজ, ০৩ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে