ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

টেক্সটাইল শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক মারে আ.লীগ

২০২৫ ডিসেম্বর ১২ ২১:১২:৪৩
টেক্সটাইল শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক মারে আ.লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন যে, এই খাতটির ওপর দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বিপর্যয় বয়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্পিনিং শিল্প রক্ষার দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিল্পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দাবি করেন যে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টেক্সটাইল খাতের ২৫ শতাংশ প্রণোদনা কমিয়ে মাত্র দেড় শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল, যা এই শিল্পের পতনে চূড়ান্ত আঘাত হানে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সালমা গ্রুপের প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার আজহার আলী। তিনি বলেন, সরকারের ভুল নীতির কারণেই বর্তমানে টেক্সটাইল শিল্পকে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ এই খাতে কর্মরত শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভুগছেন।

তাঁর দেওয়া তথ্যানুসারে, ইতিমধ্যেই ৩৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মসংস্থানহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে চালু থাকা বাকি কারখানাগুলোও মাত্র ৪০ ভাগ ক্যাপাসিটিতে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে এবং এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই শিল্পের ধস ঠেকানো সম্ভব হবে না বলে তিনি সতর্ক করেন।

লিখিত বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার আজহার আলী আরও উল্লেখ করেন যে, গত কয়েক বছর ধরে কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এর ফলে প্রায় ৪০ ভাগ শিল্প-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেকার হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। তিনি শিল্পকে বাঁচাতে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।

সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—দেশি সুতা ব্যবহারে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলে ৩০ শতাংশ ছাড়, সুতা আমদানি বন্ধে অ্যান্টি ডাম্পিং ট্যাক্স বা সেইফগার্ড ডিউটি প্রয়োগ, ইডিএফ (রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল) ফান্ড পুনর্বহাল, তৈরি পোশাক রপ্তানির উৎপাদন খরচের ৭০ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয় উৎস থেকে কেনার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা, এবং রিসাইকেল পণ্য উৎপাদনে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার আজহার আলী বলেন, একসময় স্পিনিং মিলে ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো, যার ভিত্তিতেই দেশে টেক্সটাইল মিল গড়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার তা কমিয়ে দেড় শতাংশে নামিয়ে আনলে এই শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক মারা হয়।

তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশ যখন প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, ঠিক তখনই ভারত সুতা রপ্তানিতে ১১ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে। এর ফলস্বরূপ, কম দামে ভারতের সুতা দেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। বর্তমানে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়, সেই টাকা পেতেও বাংলাদেশের মিলগুলোকে এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, যেখানে ভারতে মাত্র তিন দিনের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করা হয়।

তিনি আরও সতর্ক করে দেন যে, ২২ মাস ধরে ইডিএফের সীমা কমিয়ে দেওয়ায় মিলগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকুচিত হয়েছে এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুতার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী সুতার দাম না পাওয়া গেলে আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর পর অধিকাংশ মিল চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

বেঙ্গল এনএফকের পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক তার বক্তব্যে জানান, নানা কারণে বর্তমানে ৪০টি স্পিনিং মিল বন্ধ রয়েছে। আর যেসব মিল চালু আছে, সেগুলোও ৬০ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, পোশাক প্রস্তুতকারক বা গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে সুতা আমদানি করায় দেশীয় সুতা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে, যা দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলো কত টাকার সুতা, কাপড় ও অ্যাক্সেসরিজ আমদানি করছে—সেই হিসেব করার সময় এসেছে। ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক আরও বলেন, টেক্সটাইল হলো গার্মেন্টসের মেরুদণ্ড এবং এটা বুঝতে যত দেরি হবে, দেশের তত ক্ষতি হবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যারা এখন ভারত থেকে আড়াই ডলারে সুতা আমদানি করছেন, দেশের টেক্সটাইল শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে তাদের ওই সুতা ৫ ডলারে কিনতে হবে।

ওয়ান কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, টেক্সটাইল শিল্পে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী হলো ভারত। তিনি মনে করেন, নীতি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমেই সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তিনি দাবি করেন, প্রণোদনা দিলে সরকারের হয়তো ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে, কিন্তু তাতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত একদিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান বাড়বে। তিনি আরও বলেন, কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও মালিকরা হয়তো কোনো না কোনোভাবে টিকে থাকতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আইইবির গার্মেন্টস বিভাগের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মহিউদ্দিন আহমেদ এবং ইনস্টিটিউশন অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টসের (আইটিইটি) সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার এনায়েত হোসেন। এছাড়া, আহমেদ গ্রুপের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার শান্তিময় দত্ত, আরমাডা গ্রুপের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ, গ্রিনটেক্স স্পিনিংয়ের নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিনসহ শিল্প খাতের অন্যান্য শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে