ঢাকা, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ঢাকা-১৪ আসনে ভোটযুদ্ধে ‘ভাই-বোন’

২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১০:৫৭:৪২
ঢাকা-১৪ আসনে ভোটযুদ্ধে ‘ভাই-বোন’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-১৪ আসনের নির্বাচনে এবার মুখোমুখি হয়েছেন এক ভাই ও এক বোন—একজন ছিলেন গুমের শিকার, অন্যজন গুম হওয়া ব্যক্তির বোন। দুজনই দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী—জামায়াতে ইসলামীর ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান) এবং বিএনপির সানজিদা ইসলাম তুলি। নির্বাচনী প্রচারে তারা একে অপরকে ‘ভাই’ ও ‘বোন’ বলে সম্বোধন করছেন—যা ভোটের মাঠে এনে দিয়েছে এক মানবিক আবহ।

রাজধানীর দারুস সালাম, শাহ আলী, মিরপুরের আংশিক এলাকা এবং সাভারের কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসনের ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ।

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান)—আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আট বছর গুম থাকার পর চলতি বছরের ৫ আগস্ট মুক্তি পান। এরপর জামায়াত আমিরের আহ্বানে নির্বাচনে অংশ নেন।

আরমানের বাবা মীর কাসেম আলী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৬ সালে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। বাবার মামলায় লড়তে দেশে ফিরে আরমানও নিখোঁজ হন।

বর্তমানে কাউন্দিয়া, বনগাঁও ও মিরপুরের একাধিক ওয়ার্ডে আরমানের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে এলাকা। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, লিফলেট বিতরণ, মসজিদে জনসংযোগ—সব মিলিয়ে তার প্রচারণা জমজমাট।

অন্যদিকে, বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন সানজিদা ইসলাম তুলি, যিনি গুম হওয়া বিএনপি নেতা সুমনের বোন। শুরুতে প্রয়াত এমপি এসএ খালেকের সন্তান এসএস সিদ্দিক সাজু ও যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজ প্রার্থী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন; তবে শেষ পর্যন্ত দল মনোনয়ন দেয় তুলিকে।

তুলির প্রচারণায় আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন। মাঠে নেমেই তুলি আবেগঘন বক্তব্যে আলোচনায় আসেন।

তিনি বলেন,“আরমান ভাই আমার সেই ভাই, যাকে আয়নাঘরের অন্ধকার থেকে ফেরত পাওয়া গেছে। সুমন ভাইকে এখনো পাইনি, তাই তার মতো গুম হওয়া পরিবারগুলোর অধিকারের জন্য আমি মাঠে আছি। আমার অনেক দোয়া আরমান ভাইয়ের জন্য।”

তিনি আরও বলেন,“আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা থাকবে। এই আসনের সমস্যাগুলো—মাদক, যোগাযোগ ও চিকিৎসা—সবই আমার নির্বাচনি ইশতেহারে থাকবে।”

বিএনপি প্রার্থীকে ‘বোন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন জামায়াত প্রার্থী ব্যারিস্টার আরমানও। হুড খোলা গাড়িতে প্রচারণা চালাতে গিয়ে তিনি বলেন,“তুলি আমার বোন। আমাদের লক্ষ্য একই—একটি মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।”

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন,“মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কাউন্দিয়া-বনগাঁওয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সহজলভ্যতা বাড়াব।”

দলের ভেতরে কিছু ক্ষোভ থাকলেও বিএনপির অনেক কর্মী ও সাধারণ ভোটার এ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে দেখছেন ‘মানবিক রাজনীতির উদাহরণ’ হিসেবে।

স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট আকরাম মির্জা বলেন,“ঢাকা-১৪ আসনে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির রাজনীতির বদলে নীতিনিষ্ঠ প্রার্থীরা আসছেন—এটাই বড় বার্তা। বিএনপি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।”

মিরপুরের বাসিন্দা মাহমুদ হাসান বলেন,“আরমান গুম থেকে ফিরে এসেছে, তুলি গুম হওয়া ভাইয়ের অধিকার নিয়ে লড়ছেন। দুজনই মানবিক প্রতীক হয়ে উঠেছেন।”

২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা-১৪ আসনে মোট ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৯, নারী ২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৪, এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন।

অতীতে এ আসনে পালাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের আসলামুল হক, আগা খান মিন্টু ও মাইনুল হাসান খান নিখিল এবং বিএনপির প্রয়াত এসএ খালেক এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

গুম থেকে ফিরে আসা জামায়াত প্রার্থী আরমান ও গুম হওয়া ভাইয়ের বোন বিএনপি প্রার্থী তুলির লড়াইয়ে ঢাকার ১৪ নম্বর আসন এখন ব্যতিক্রমী মানবিক রাজনীতির এক প্রতীকী মঞ্চে পরিণত হয়েছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে