ঢাকা, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

কুরআনের ঈসা (আঃ) বনাম বাইবেলের যিশু

২০২৫ অক্টোবর ২০ ১২:১২:০৯
কুরআনের ঈসা (আঃ) বনাম বাইবেলের যিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত মারিয়াম (আঃ) ও ঈসা (আঃ) (যিশু) এবং তাদের জীবন সম্পর্কে কুরআন ও বাইবেলে উল্লিখিত কাহিনীগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর সাথে প্রাসঙ্গিক ঐতিহাসিক প্রমাণাদিও উল্লেখ করা হয়েছে।

মারিয়াম (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর অলৌকিক জন্ম:

মিশরের বুকে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরে। ফেরাউন বনি ইসরাইলের নবজাতক পুত্রসন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এই কঠিন পরিস্থিতিতে মারিয়াম (আঃ)-এর মা হান্না (কুরআন অনুযায়ী) অথবা অ্যানা (বাইবেল অনুযায়ী) আল্লাহর কাছে পুত্রসন্তান কামনা করেন এবং তাকে পবিত্র জেরুজালেম মন্দিরের (বাইতুল মাকদিস) সেবায় উৎসর্গ করার মানত করেন। তবে তিনি একটি কন্যা সন্তান (মারিয়াম) লাভ করেন। মারিয়াম (আঃ) বাইতুল মাকদিসে আল্লাহর ইবাদতে দিনরাত অতিবাহিত করতেন এবং সেখানে নবী যাকারিয়া (আঃ) (বাইবেলে সখরিয়) তার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।একদিন, মারিয়াম (আঃ) যখন আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত ছিলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) (বাইবেলে গাব্রিয়েল) তাঁর সামনে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের রূপে আবির্ভূত হন এবং তাঁকে একটি পবিত্র পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দেন। মারিয়াম (আঃ) প্রশ্ন করেন, "কীভাবে আমার পুত্র হবে, যখন কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই?" জবাবে জিবরাঈল (আঃ) বলেন, "আল্লাহর জন্য এটি খুবই সহজ। আর আমরা তাকে মানুষের জন্য একটি নিদর্শন ও আমাদের পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে তৈরি করব।" বাইবেলে বলা হয়েছে, একজন দেবদূত যোসেফের কাছে স্বপ্নে আবির্ভূত হন এবং তাকে মারিয়ামকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে বলেন, কারণ তাঁর গর্ভের সন্তান পবিত্র আত্মার (রূহুল কুদুস) দ্বারা হয়েছে। এই অলৌকিক উপায়ে ঈসা (আঃ) জন্মলাভ করেন।

শৈশবকাল ও নবুওয়াত প্রাপ্তি:

কুরআন অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) ছোটবেলায় দোলনায় থাকতেই কথা বলতে শুরু করেন এবং নিজের নবুওয়াতের ঘোষণা দেন। এটি মানুষের জন্য ছিল এক বিরাট অলৌকিক ঘটনা। তিনি নিজেকে আল্লাহর বান্দা, কিতাবের ধারক ও নবী হিসেবে পরিচয় দেন এবং বলেন যে তিনি তাঁর মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারকারী হবেন এবং নামাজ ও যাকাতের আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি মাটি দিয়ে পাখি তৈরি করে তাতে ফুঁ দিলে তা আল্লাহর অনুমতিতে জীবন্ত পাখিতে পরিণত হতো এবং সাহাবীদের (বাইবেলে প্রেরিতদের) জন্য আকাশ থেকে খাবার আসত।

তবে বাইবেলে, এই সময়ের কোনো ঘটনা উল্লিখিত নেই। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, যোসেফকে স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত নির্দেশের মাধ্যমে তারা ইসাকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে যান। সেখানে তারা হেরোদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং পরে নাসারাতে ফিরে আসেন।

নবুওয়াতের দায়িত্ব শুরু করার আগে ঈসা (আঃ) আধ্যাত্মিকভাবে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেন। কুরআন অনুযায়ী, জিবরাঈল (আঃ) (রূহুল কুদুস) তাঁর কাছে ওহী নিয়ে আসেন। বাইবেলে বলা হয়েছে, বাপ্তিস্মের পর পবিত্র আত্মা তাঁকে নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়, যেখানে তিনি ৪০ দিন শয়তানের প্রলোভনে পরীক্ষিত হন।

ঈসা (আঃ)-এর শিক্ষা ও তার প্রতি অবিশ্বাস:

ঈসা (আঃ) মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান জানান এবং মিথ্যা উপাসনা ত্যাগ করে শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ দেন। তিনি তার জাতিকে হালাল ও হারামের বিষয়ে পথপ্রদর্শন করেন, নৈতিকতা শিক্ষা দেন এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু তাঁর জাতি (বনি ইসরাইল) ক্রমাগত তাঁর প্রতি অবিশ্বাস ও অবাধ্যতা প্রকাশ করতে থাকে। তাঁর অনেক অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করা সত্ত্বেও তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী ও জাদুকর বলে আখ্যায়িত করে।কুরআন ও বাইবেল উভয়ই ভবিষ্যৎ নবী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, শেষ নবীকে চিনে নেওয়ার জন্য একটি ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে যে, তিনি তোমাদের সঠিক পথপ্রদর্শন করবেন।

ঈসা (আঃ)-এর জীবনের পরিসমাপ্তি:

কুরআন অনুযায়ী, অবিশ্বাসীরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা ও ক্রুশবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করে। তবে আল্লাহ তাঁদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন। ঈসা (আঃ)-এর মতো দেখতে অন্য একজন ব্যক্তিকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় এবং ঈসা (আঃ)-কে সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়। তিনি এখনো জীবিত আছেন এবং কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। তিনি ফিরে এসে মানবজাতিকে বিভ্রান্তি থেকে উদ্ধার করবেন এবং প্রকৃত ইসলাম (আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ) প্রতিষ্ঠা করবেন।

অন্যদিকে, বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর দেহকে একটি কবরে রাখা হয় এবং তিন দিন পর তিনি পুনরুত্থিত হন। এরপর তিনি তাঁর শিষ্যদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করেন এবং তাদের সাথে কথা বলেন। সবশেষে, তিনি স্বর্গে আরোহণ করেন।

ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় বিশ্লেষণের গুরুত্ব:

কুরআন ও বাইবেলের মধ্যে উল্লিখিত মারিয়াম (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর জীবনের ঘটনাগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কুরআন ইসাকে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা অস্বীকার করে এবং তার জায়গায় অন্য একজনকে ক্রুশবিদ্ধ করার কথা বলে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে