ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন

২০২৫ অক্টোবর ০৯ ২১:২৬:৩৬
পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক ঐতিহাসিক রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক সূচনা হতে যাচ্ছে। দেশের পাঁচটি আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হতে চলেছে, সেগুলো হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যাংকগুলো মারাত্মক আর্থিক সংকটে জর্জরিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে—তারল্য সংকট, শ্রেণিকৃত ঋণের পাহাড়, প্রভিশন ঘাটতি এবং ভয়াবহ মূলধন ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলো কার্যত দেউলিয়া দশায় পৌঁছেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিকবার তারল্য সহায়তা দিলেও কোনো ফল আসেনি। এই কঠিন বাস্তবতা বিবেচনা করে সরকার ‘রেজল্যুশন পরিকল্পনা ২০২৫’ নামে নতুন কাঠামো অনুমোদন করেছে। এই কাঠামোর আওতায় পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও দায় একত্রিত করে একটি শক্তিশালী নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে।

নতুন ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা, এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল অঙ্কের মূলধনের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে, যার অর্ধেক আসবে ক্যাশ আকারে এবং বাকি অর্ধেক সুকুক বন্ডের মাধ্যমে।

অন্যদিকে, বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে ‘বেইল-ইন’ পদ্ধতির মাধ্যমে, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আমানতের একটি অংশ মূলধনে রূপান্তরিত হবে। তবে সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে এবং প্রয়োজনে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে তাদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় পরিচালিত হলেও, ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে।

কেপিএমজি (শ্রীলঙ্কা) ও আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (শ্রীলঙ্কা)-এর মতো আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের মূল্যায়নে উঠে এসেছে—ব্যাংকগুলোতে ছিল অসংগঠিত পরিচালনা, অস্বচ্ছ ঋণ বিতরণ, দুর্বল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ভয়াবহ মূলধন ঘাটতি। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী, একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন না, কারণ তাদের নিট সম্পদ ইতিমধ্যেই ঋণাত্মক। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুরবস্থার জন্য দায়ী পরিচালনা পর্ষদ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অপরাধে জড়িত ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকার আশা করছে, এই বড় পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট দূর হবে এবং আর্থিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে