ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

১০টি নিষিদ্ধ স্থান যেখানে সাধারণ মানুষ যেতে পারেনা!

২০২৫ অক্টোবর ০১ ১১:৩২:৪৩
১০টি নিষিদ্ধ স্থান যেখানে সাধারণ মানুষ যেতে পারেনা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে মানুষ সহজে যেতে পারে না বা যাওয়া সম্ভব নয়, কিছু স্থান রহস্যময় এবং বিপদজনক।

আজকে আমরা পৃথিবীর এমনই ১০টি স্থান সম্পর্কে জানবো:

১. নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ড (North Sentinel Island): ভারত মহাসাগরে অবস্থিত নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপটি এখনো প্রস্তর যুগে আটকা পড়ে আছে। এই দ্বীপে বসবাসকারী সেন্টিনেল উপজাতি বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং যেকোনো বহিরাগতকে দেখামাত্র হত্যা করে। ২০০৬ সালে কিছু জেলে ভুল করে এই দ্বীপে পৌঁছালে আদিবাসীরা কোনো সতর্কতা ছাড়াই তাদের হত্যা করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনী হেলিকপ্টার নিয়ে তাদের মৃতদেহ আনতে গেলে আদিবাসীরা তীর-ধনুক দিয়ে তাদের আক্রমণ করে। এই উপজাতি আজও কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না। ভারত সরকার বাইরের কোনো ব্যক্তির এই দ্বীপে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

২. স্নেক আইল্যান্ড (Snake Island): ব্রাজিলের উপকূলের ঠিক পাশে অবস্থিত এই দ্বীপটিকে সাধারণত স্নেক আইল্যান্ড বা সাপের দ্বীপ বলা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এই দ্বীপে ৪,০০০ এরও বেশি বিষাক্ত সাপ বাস করে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক হলো গোল্ডেন ল্যান্সহেড ভাইপার। এই সাপের বিষ এতটাই শক্তিশালী যে মানুষের মাংস গলিয়ে দিতে পারে। এই সাপগুলো কেবল এই দ্বীপেই পাওয়া যায়। ব্রাজিল সরকার এই দ্বীপে যাওয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

৩. এরিয়া ৫১ (Area 51): আমেরিকার নেভাদা মরুভূমিতে অবস্থিত এই সামরিক ঘাঁটিটি কয়েক দশক ধরে এলিয়েন, ইউএফও (UFO) এবং গোপন পরীক্ষার জন্য বিখ্যাত। এখানে নিরাপত্তা এতটাই উচ্চ যে কেউ যদি ভুলবশত ঘাঁটির কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তবে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গুলি করা হয়। লোকেদের দাবি, এখানে এলিয়েনদের মৃতদেহ এবং তাদের মহাকাশযান অধ্যয়ন করা হয়। ১৯৪৬ সালে যখন রোজওয়েলের ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমেরিকা বলেছিল যে এটি একটি আবহাওয়ার বেলুন ছিল, কিন্তু লোকেরা বিশ্বাস করে যে এটি আসলে একটি এলিয়েন মহাকাশযান ছিল, যা এখানে আনা হয়েছিল এবং লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

৪. ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভস (Vatican Secret Archives): বিশ্বের সবচেয়ে গোপন লাইব্রেরি হলো ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভস। এটি ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে গোপন নথি লুকিয়ে রাখা হয়। এই লাইব্রেরিতে রক্ষিত প্রাচীন এবং গোপনীয় রেকর্ড সম্পর্কিত তথ্য শত শত বছরের পুরনো। শুধুমাত্র কিছু নির্বাচিত গবেষক এবং পাদরিরা এই নথিগুলো অ্যাক্সেস করতে পারেন এবং তাদের কিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। ভ্যাটিকান কর্মকর্তারা এই সংরক্ষণাগার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য দেননি এবং এর নিরাপত্তা এতটাই কঠোর যে আজ পর্যন্ত এর রহস্যের সমাধান করতে পারেননি। এখানে যিশু খ্রিস্ট এবং তার জীবন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নথি রাখা আছে। এর সাথে এলিয়েন সম্পর্কিত তথ্যও গোপন রাখা হয়।

৫. ডার্ক এনার্জি টেম্পল (Dark Energy Temple): হিমালয়ের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত এই রহস্যময় মন্দিরটির সঠিক অবস্থান কেউ জানে না। বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্দিরটি হাজার হাজার বছর আগে কোনো রহস্যময় শক্তি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এখানে যাওয়া লোকদের সম্পর্কে কেউ কখনো জানতে পারে না। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে এই স্থানটি একটি ভিন্ন মাত্রার সাথে সংযুক্ত, যেখানে যাওয়ার পরে কেউ পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে না। অনেক ঋষি এবং গবেষক এই মন্দিরের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন কিন্তু তারা হয় অদৃশ্য হয়ে যান অথবা পাগল হয়ে যান।

৬. আইল্যান্ড অফ ডেথ (Island of Death): পৃথিবীর অনেক দ্বীপ তাদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে বিখ্যাত। কিন্তু কিছু দ্বীপের ইতিহাস এতটাই ভূতুড়ে এবং রহস্যময় যে মানুষ সেখানে যেতে ভয় পায়। এই দ্বীপটি তার পুরনো কবর, ভৌতিক ঘটনা এবং অদ্ভুত খারাপ শব্দের জন্য বিখ্যাত। বিশ্বাস করা হয় যে এখানে অদ্ভুত কঙ্কাল এবং কাপড়ের টুকরো পাওয়া যায়, যা বহু শতাব্দী পুরনো। এখানকার বাতাস প্রায়ই অদ্ভুত এবং কিছু লোক বলে যে এখানে গেলে রাতে অদ্ভুত এবং ভৌতিক শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এই দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা কখনো করা হয়নি। এখানে আসা ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই দ্বীপের ভূতুড়ে এবং রহস্যময় পরিবেশের পর আর ফিরে আসেননি।

৭. মাউন্ট কৈলাস (Mount Kailash): ঈশ্বরের আবাসস্থল বা তিব্বতে অবস্থিত কৈলাস পর্বতকে বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র এবং রহস্যময় পর্বতগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং বন ধর্মের জন্য এই পর্বতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বতের আরেকটি রহস্য আছে, কোনো মানুষ এটি আরোহণ করতে সফল হয়নি। অনেকেই এই পর্বত আরোহণের অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু প্রতিবারই কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। ১৯৫০-এর দশকে চীনের কিছু লোক কৈলাস পর্বত আরোহণের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেখানে আরোহণের সময় হঠাৎ তাদের যান্ত্রিক সরঞ্জামগুলো ভেঙে পড়ে। কৈলাস পর্বতের চারপাশে অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। বলা হয় যে এখানে মানুষ জ্বলন্ত আলো এবং অদ্ভুত শব্দ শুনতে পায়। বিজ্ঞান এটিকে কেবল একটি ভৌতিক ঘটনা বলে মনে করে, কিন্তু স্থানীয় মানুষ এটিকে ঐশ্বরিক শক্তির সাথে যুক্ত করে। আজ পর্যন্ত কৈলাস পর্বতের রহস্যের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

৮. বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (Bermuda Triangle): বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এমন একটি নাম, যা শুনলেই ভয় এবং রহস্যের অনুভূতি জাগে। এই অঞ্চলটি আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত, যেখানে প্রধান বিন্দু মিয়ামি, বারমুডা এবং পুয়ের্তো রিকো মিলিত হয়। এখানে সমুদ্রে কয়েক ডজন জাহাজ এবং বিমান কোনো চিহ্ন ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং এই কারণেই এই অঞ্চলটিকে সমুদ্রের অভিশপ্ত ত্রিভুজ বলা হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা শত শত বছর ধরে ঘটছে। এই অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো বিপদজনক ঝড়, অদ্ভুত ধরনের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র এবং বিজ্ঞানের বাইরের ঘটনাগুলো কোনো সতর্কতা ছাড়াই এখানে ঘটতে শুরু করে। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে এই অঞ্চলটি এমন একটি শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যা জাহাজ এবং বিমানগুলোকে তার জালে আটকে রাখে। একইসাথে কিছু বিজ্ঞানী এটিকে কৃত্রিম সমুদ্রের অদৃশ্য ঝড় বা চৌম্বকীয় অস্বাভাবিকতার সাথে যুক্ত করে। যার কারণে কম্পাস এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক ডিভাইস কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তবে একটি জিনিস স্পষ্ট যে কেউ যদি এই অঞ্চলে প্রবেশ করে, সে স্বচ্ছভাবে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং তার আর কোনো অনুসন্ধান করা যায় না।

৯. হোইবাক্ক মাউন্টেন (Hoibakk Mountain): নরওয়েতে অবস্থিত হোইবাক্ক মাউন্টেন বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় পর্বতমালাগুলোর মধ্যে একটি। এই পর্বত সম্পর্কে বলা হয় যে এখানে কেউ বেশিক্ষণ থাকতে পারে না, কারণ এখানকার পরিবেশ মানুষের মনকে প্রভাবিত করে এবং তাকে পাগল করে তুলতে পারে। এটি কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা নয়।

১০. আওকিগাহারা ফরেস্ট (Aokigahara Forest): যদি পৃথিবীর কোনো জায়গাকে সবচেয়ে ভয়ংকর বলা হয়, তাহলে জাপানের আওকিগাহারা ফরেস্ট এই তালিকার শীর্ষে থাকবে। এই বনটি মাউন্ট ফুজি-এর কাছে অবস্থিত এবং এটিকে আত্মহত্যার বনও বলা হয়। প্রতি বছর শত শত মানুষ এখানে প্রাণ দিতে আসে। বলা হয় যে এই বনে একটি অদৃশ্য শক্তি আছে যা মানুষকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করে। যারা বনে যায় তারা অনেক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা লাভ করে। চারপাশ থেকে ফিসফিসানি, গাছের মাঝে অদ্ভুত ছায়া এবং ঘন কুয়াশায় মানুষ পথ হারিয়ে ফেলে। এমনকি গাইডেড ট্যুরের সময়ও মানুষকে সতর্ক করা হয় যে বনের খুব গভীরে না যেতে, না হলে ফিরে আসা কঠিন হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন এই বনের রহস্যময় শক্তি এবং মাটিতে উপস্থিত চৌম্বকীয় উপাদান মানুষের মানসিক অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। এই বন কেবল একটি জায়গা নয়, বরং একটি ভীতিকর ধাঁধা, যার রহস্য এখনো অমীমাংসিত।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে