ঢাকা, বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারের সূচক নয়, সংস্কারে বেশি মনোযোগ বিএসইসির

২০২৫ আগস্ট ১২ ১৬:০৯:৩৪
শেয়ারবাজারের সূচক নয়, সংস্কারে বেশি মনোযোগ বিএসইসির

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেয়ারবাজার সংস্কার ছিল তাদের অন্যতম বড় অঙ্গীকার। এক বছর পর এসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের ৩০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে এর ফল মিশ্র—কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অনেক কাঠামোগত পরিবর্তন এখনও বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।

সূচক নয়, সংস্কারে মনোযোগ

আগে বাজার সূচক বাড়াতে ব্রোকারদের শেয়ার কিনতে নিয়মিত চাপ দিত বিএসইসি। এখন সেই চর্চা বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রোকার হাউস কর্মকর্তাদের মতে, এবার সূচক নয়, সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে কমিশন।

জালিয়াতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ

নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে বিএসইসি গত এক বছরে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা শেয়ার কারসাজির মামলাগুলো নতুন করে সক্রিয় করেছে। ১৯৯৩ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ—১,১০০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। আগে অবৈধ লাভের ২০% পর্যন্ত জরিমানা হতো, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯০% পর্যন্ত।

সবচেয়ে আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি রয়েছে, যেখানে পাঁচ প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলামকে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও ১৯০ কোটির বেশি জরিমানা হয়েছে, যার মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নামও রয়েছে।

কাঠামোগত পরিবর্তনের উদ্যোগ

সরকার পরিবর্তনের পর পাঁচ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়, যারা আইপিও, মার্জিন ট্রেডিং ও মিউচুয়াল ফান্ড সংস্কারের ব্লুপ্রিন্ট জমা দিয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকী মনে করেন, প্রস্তাবগুলো আনতে এত সময় নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।

আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া এখন ডিজিটাল হচ্ছে, যা প্রভাব খাটানোর সুযোগ কমাবে। ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম আশা করছেন, এ বছরই এটি পুরোপুরি চালু হবে।

নতুন বাজেটে বিও অ্যাকাউন্ট ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমে ১৫০ টাকা হয়েছে, ব্রোকারদের টার্নওভার ট্যাক্স ০.০৫% থেকে ০.০৩% করা হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত ও অনতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের ব্যবধান আরও বেড়েছে।

বাজারের চিত্র

আগের সরকারের পতনের পর ডিএসইএক্স সূচক তিন দিনে ৫৮৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার অতিক্রম করেছিল। পরে তা ৪ হাজার ৬১৫-তে নেমে এলেও সম্প্রতি আবার ৫ হাজার ৩৫০-এর উপরে উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাজার অতিমাত্রায় অবমূল্যায়িত ছিল, তাই এই পুনরুদ্ধার স্বাভাবিক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার কমা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—গত এক বছরে কোনো নতুন আইপিও আসেনি, বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। তবুও ডিএসই চেয়ারম্যান আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমরা স্বচ্ছতার সংস্কৃতি গড়ে তুলছি। বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে ফিরছেন। এখনো লক্ষ্য পূর্ণ হয়নি, তবে সঠিক পথে আছি।”

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে