ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

শুল্ক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র

২০২৫ আগস্ট ০৮ ২২:২৭:০৩
শুল্ক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট থেকে। অর্থাৎ, ভারতের হাতে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আছে মাত্র ২০ দিন।

এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাফ জানিয়েছেন, দেশের কৃষক, দুগ্ধ ও মৎস্য খাতের স্বার্থে তিনি কোনো আপস করবেন না। দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "আমাদের কাছে কৃষকের কল্যাণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি, এর জন্য আমাকে বড় মূল্য দিতে হতে পারে, তবুও আমি পিছপা হব না।" যদিও তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বা শুল্ক প্রসঙ্গে কিছু বলেননি, তবুও তার বক্তব্যে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ভারতের তেল কেনা অব্যাহত থাকায় ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থনৈতিক সুবিধা পাচ্ছেন। তাই ভারতকে ‘শাস্তি’ দিতেই এই অতিরিক্ত শুল্ক। এর ফলে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের শ্রমনির্ভর রপ্তানি খাত, বিশেষ করে পোশাক, গয়না ও হস্তশিল্প। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা টেনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।

এতে ভারতের ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বার্ষিক রপ্তানি হুমকির মুখে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার, যা দেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ২.২ শতাংশ। প্রবাহে ছেদ পড়লে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা।

ইতোমধ্যে ভারতের শেয়ারবাজারে পতন ঘটেছে, উদ্বেগ ছড়িয়েছে শিল্পমহলে। পোশাক রপ্তানিকারক সংগঠনের প্রধান সুধীর সেকরি বলেছেন, এই শুল্কে আমাদের খাত টিকবে না। আমরা সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চাইছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘অন্যায়’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করে জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব দাম্মু রবি বলেছেন, এটি সাময়িক সমস্যা। তবে আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।

এই সংকটের মধ্যে মোদি সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরালো হয়েছে। শিগগিরই মোদি চীন সফরে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের পর এই প্রথমবার। ধারণা করা হচ্ছে, এই সফর ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সমন্বয় তৈরির অংশ। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি এই শুল্কবিরোধী বিষয়ে মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

২০১৯ সালেও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক উত্তেজনায় জড়িয়েছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে। পাল্টা জবাবে ভারতও তখন ২৮টি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল।

এবারও সেই পথে হাঁটবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে সরকারের ভেতরে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চলমান সংকটে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও চাপ বাড়ছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, যদি কেউ আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির কারণে শাস্তি দিতে চায়, তবে তারা ভারতের শক্তি বোঝে না। রাহুল গান্ধী একে আখ্যা দিয়েছেন ‘অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে।

ইতিমধ্যে, দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দফা বাণিজ্য আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। মূল বিরোধ কৃষি, দুগ্ধ খাতের বাজার খুলে দেওয়া এবং রুশ তেল আমদানি বন্ধ করা নিয়ে। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল আবার ভারতে আসছে।

সিরাজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে