ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে চাঙ্গা করতে সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত

২০২৫ মে ২৩ ১৪:৫৬:৪৭
শেয়ারবাজারে চাঙ্গা করতে সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার শেয়ার বাজারে নতুন প্রাণ ফেরানোর জন্য বড় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক ও কৌশলগত কোম্পানির শেয়ার সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, এবং এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-কে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এবং এতে উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার শেয়ার বাজারে নতুন করে আস্থা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তালিকাভুক্তির প্রস্তাবে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে

১. নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি

২. বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি

৩. গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি

৪. জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম

৫. সিলেট গ্যাসফিল্ড

৬. বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড

৭. রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড

৮. পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি

৯. লিকুফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস

১০. বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (BTCL)

১১. টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড

১২. টেলিফোন শিল্প সংস্থা (TSS)

১৩. বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস

১৪. সোনারগাঁও হোটেল

১৫. ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি

১৬. কর্ণফুলী পেপার মিলস

১৭. চিটাগং ডকইয়ার্ড

১৮. বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি

১৯. প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ

২০. আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি

২১. ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ

এর আগে ১১ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেয়ারবাজারের পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে পাঁচটি মূল নির্দেশনা দেন, যার বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতেই ২৩ মে'র বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। নির্দেশনাগুলো হলো:

১. সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনা।

২. তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে ব্যবধান বাড়ানো (৫% থেকে ১০%)।

৩. বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে শেয়ারবাজার সংস্কারে গতি আনা।

৪. অনিয়মে জড়িত শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।

৫. দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংকের পরিবর্তে শেয়ারবাজার ব্যবহার।

প্রধান উপদেষ্টা এসব নির্দেশনার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।বৈঠকসূত্রে জানা গেছে যে, যেসব বড় ও সম্ভাবনাময় কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, তাদের উপর জোর না করে বরং প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করার কৌশল গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে তারা বাজারে আসার জন্য উত্সাহিত হবে, যা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে।

অতিরিক্তভাবে, বিএসইসি জানিয়েছে যে, আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবটি কার্যকর হলে, বড় কোম্পানিগুলোর বাজারমুখী হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়লে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে বাজার আরও গভীর, শক্তিশালী ও টেকসই হবে। এই উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে বাজারভিত্তিক অর্থায়নের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন-

দশ হাজার কোটি ঋণের বোঝায় আইসিবি, প্রস্তাব বিশেষ তহবিলের

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে