ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
Sharenews24

বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ: ব্রোকারেজ হাউজের সনদ বাতিল

২০২৫ মে ২১ ১৫:২৯:৪৩
বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ: ব্রোকারেজ হাউজের সনদ বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত একটি ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাতিলকৃত প্রতিষ্ঠানটি হলো শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেড (ট্রেক নম্বর-১৭১), যা স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার হিসেবে নিবন্ধিত ছিল।

বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ঘাটতি, সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সব দিক বিবেচনা করে সংস্থাটি এই সিদ্ধান্ত নেয়।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি সিডিবিএল ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অবহিত করা হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি অনিয়মের বিস্তারিত

অর্থনৈতিক বছর ২০১৮-১৯ এর নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, ডিএসইর ১৮৬টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে ১৮টির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের অর্থের ঘাটতি ধরা পড়ে। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ কোটি টাকার ঘাটতি পাওয়া যায়। এরপর ২০২০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটিসহ আরও বেশ কিছু ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়ে তদন্ত শেষে এ ধরনের গুরুতর অপরাধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বিএসইসির আইনি সিদ্ধান্ত

বিএসইসি জানায়, প্রতিষ্ঠানটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ৬(১), ৬(২), ৭(৩); স্টক-ডিলার ও ব্রোকার বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১১; এবং ডিপজিটরি প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ৩৪(১) ও (২) লঙ্ঘন করেছে। ফলে, সংস্থাটির স্টক ব্রোকার ও ডিলার হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বাতিল হওয়া সনদ দুটি হলো—নিবন্ধন নম্বর ৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০৯/৩৪৭ (তারিখ: ২১. জুন, ২০০৯) এবং ৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০২/৬৪ (তারিখ: ৫ মে, ২০০২)। ডিএসইকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মালিকানা পরিবর্তন ও সাদ মুসা গ্রুপ

২০২২ সালের জানুয়ারিতে, ব্রোকারেজ হাউজটির ১০০% মালিকানা সাদ মুসা গ্রুপ অধিগ্রহণ করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু করতে চাইলেও, বিএসইসির শর্তে ছিল—সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ঘাটতি পূরণ, সুদ আদায়, ও শেয়ার হস্তান্তর সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। তদন্তে আরও বড় অঙ্কের ঘাটতির তথ্য উঠে আসে—মিলিত ঘাটতি দাঁড়ায় প্রায় ৫৮৫ কোটি টাকা, যা ১০৮ টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে সর্বমোট।

সাদ মুসা গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা

সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং মানি লন্ডারিংয়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালত তাকে চেক প্রত্যাখ্যানের ৫টি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। মামলাগুলোর মোট দাবি ছিল প্রায় ৫৫.৯৪ কোটি টাকা। পাশাপাশি, ২০২৪ সালের মে মাসে করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজের ৪০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করে। এতে মুহম্মদ মহসিনসহ আরও ১৬ জনকে আসামি করা হয়।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুরক্ষা এবং শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। তারা বিশ্বাস করেন, নিয়মভঙ্গকারী ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ভবিষ্যতে বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে