ঢাকা, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
Sharenews24

নীতিগত ভিন্নতার টানাপোড়েনে আবারও হতাশা শেয়ারবাজারে

২০২৫ মে ১৮ ১৫:১১:২৪
নীতিগত ভিন্নতার টানাপোড়েনে আবারও হতাশা শেয়ারবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে একদিনের সাময়িক চাঙ্গাভাবের পরদিনই সূচকের ভালো পতন দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজমান আস্থা সংকট এবং নিয়ন্ত্রক মহলের বিভ্রান্তিকর বার্তা এই পতনের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

গত কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল ৩৯ পয়েন্টের বেশি। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হয়।

আজকের লেনদেনের শুরুতেও সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল—প্রথম এক ঘণ্টায় ডিএসইএক্স বেড়ে যায় প্রায় ২০ পয়েন্ট। কিন্তু মধ্যভাগ থেকে পতন শুরু হয়, যা দিন শেষে এসে আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়েন্টের বেশি কমে গিয়ে বাজারকে আবার নেতিবাচক ধারায় নিয়ে যায়।

বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগের দিনের বাজার চাঙ্গা হওয়ার পেছনে সরকার প্রধানের সহকারী উপদেষ্টা ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাজারে এমন বার্তা ছড়িয়ে পড়ে যে, উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি বাজার মনিটর করছেন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে পুনরায় বিনিয়োগ শুরু করেন।

তবে বাজারশেষে সেই খবর ছাপিয়ে বাজারে ভিন্ন খবর আসে। ওইদেন বিকেলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠকে তিনি অংশীজনদের মতামত গুরুত্ব না দিয়ে অপেশাদার আচরণ করেছেন। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, তিনি অংশীজনদের কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ তোলেন এবং তাদের একধরনের অনুশাসনও করেন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ মনে করেন, বাজারের ভবিষ্যৎ গঠনে অংশীজনদের সাথে সমন্বয়হীনতা ও নেতিবাচক মনোভাব নিয়ন্ত্রকদের আস্থার সংকট তৈরি করছে।

ফরহাদ হোসেন নামের একজন খুচরা বিনিয়োগকারী বলেন, “কাল কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও আজ আবার মনে হচ্ছে, এই বাজারে কোনো স্থিতিশীল কৌশল নেই। যারা বাজার পরিচালনা করছেন, তাদের আচরণেও শৃঙ্খলার অভাব দেখা যাচ্ছে।”

একজন প্রতিষ্ঠিত ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা জানান, “নিয়ন্ত্রকদের অবস্থান যদি দ্বৈত হয়, একদিকে সহানুভূতিশীল বার্তা, আরেকদিকে বৈঠকে অপেশাদার আচরণ—তাহলে বাজারে আস্থা ফিরবে কীভাবে?”

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক কারণে নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সিগন্যালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে—১. প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় বাড়াতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে একসাথে কাজ করতে হবে।২. অংশীজনদের সম্মানজনকভাবে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাজারের সংকেত বিভ্রান্তিকর না হয়।৩. বিনিয়োগকারীদের জন্য নিয়মিত ও স্পষ্ট বার্তা প্রদান জরুরি, যাতে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বাজার পর্যালোচনা- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

আজ রোববার (১৮ মে) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯.৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৯১ পয়েন্টে। অন্য দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ৬.৬২ পয়েন্ট কমে হয়েছে ১ হাজার ৪৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮.০১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৮০ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ মোট ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, দর কমেছে ২৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৭টির।

টাকার অঙ্কে আজ ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ

আজ সিএসইতে ১০ কোটি ০১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৮৮টির, কমেছে ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির।

আজ সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৮.০৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪০৩ পয়েন্টে। আগেরদিন সিএএসপিআই বেড়েছিল ৪.৩৯ পয়েন্ট।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে