ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
Sharenews24

বাংলাদেশের আকাশসীমায় আসছে ৪৮ আধুনিক যুদ্ধবিমান

২০২৫ মে ১২ ০৬:৫৮:২৮
বাংলাদেশের আকাশসীমায় আসছে ৪৮ আধুনিক যুদ্ধবিমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী চীনের তৈরি চেংদু জে-১০সি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই হতে যাচ্ছে এই উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান যুক্ত করা দ্বিতীয় দেশ। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা এই উদ্যোগকে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।

ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) ১৬টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব বিমান চীনের তৈরি পুরনো এফ-৭ ইন্টারসেপ্টরসহ বেশ কিছু যুদ্ধবিমান প্রতিস্থাপন করবে।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ ৩২টি জেএফ-১৭ থান্ডার ব্লক-থ্রি যুদ্ধবিমান সংগ্রহের ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে। পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স ও চীনের চেংদু এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের যৌথভাবে তৈরি এই বিমানটি বর্তমানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই সংগ্রহকে বাংলাদেশে সামরিক সক্ষমতা জোরদারে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আকাশ আধিপত্যের প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। নয়াদিল্লি মনে করছে, এই পদক্ষেপ তার আঞ্চলিক নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য হুমকি।

বিমান কেনা নিয়ে ভারত ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এই উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করারও চেষ্টা করছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। কারণ এই যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের দুই কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী—চীন ও পাকিস্তানের তৈরি। তবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান স্পষ্ট করেছেন যে, যুদ্ধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রজন্মগত উন্নয়ন প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত ১৬টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান সংগ্রহের পরিকল্পনা মূলত বিএএফের দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকায়ন কৌশলের প্রথম ধাপ। ভবিষ্যতে আরও যুদ্ধবিমান সংগ্রহের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত রয়েছে। চীনের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ধারাবাহিকতায় এই সংগ্রহ বাস্তবায়িত হলে তা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।

চীনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান ২০১৮ সাল থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের (পিএলএএএফ) বহরে যুক্ত হয়েছে। উন্নত স্টেলথ বৈশিষ্ট্য, চীনের নিজস্ব ডব্লিউএস-১০সি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন এবং অ্যাকটিভ ইলেক্ট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ) রাডারসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণে এটি একটি শক্তিশালী ফাইটার জেট হিসেবে বিবেচিত।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, জে-১০সি বিমানটি পিএল-১৫ নামের দীর্ঘ-পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম, যা যুদ্ধের সময় শত্রুকে দৃষ্টিসীমার বাইরেও টার্গেট করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্য একে আকাশযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দেয়।

বিশ্লেষকদের মতে, জে-১০সি সংগ্রহ বাংলাদেশের সামরিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনবে। এতে বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা কৌশল আরও দৃঢ় হবে এবং আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য হুমকির জবাবে কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা বাড়বে।

সব মিলিয়ে জে-১০সি যুদ্ধবিমান সংগ্রহের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানোর পদক্ষেপ নয়, বরং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মারুফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে