ঢাকা, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
Sharenews24

যে আইনে বাতিল হতে পারে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন

২০২৫ মে ১১ ১৬:০০:২৭
যে আইনে বাতিল হতে পারে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর এবার দলটির নিবন্ধন বাতিলের দিকে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল সোমবার (১২ মে) বৈঠক করে পাঁচ সদস্যের কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় মূলত দলটির আর কোনো কার্যক্রম নেই। প্রথম কয়েক সারির নেতারা পালিয়ে দেশের বাইরে। দেশের ভেতরেও অনেকে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় দলটি সব কার্যালয় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। আইনে কোনো নিবন্ধিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সক্রিয় না থাকলেও নিবন্ধন বাতিল করার কথা বলা আছে।

রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ (বিলুপ্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও এখন আর নেই। জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলোরও একই অবস্থা।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধন পাওয়ার পর কোনো দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় না থাকলেও সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান আইনে রয়েছে। অন্যদিকে সরকার যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দলকে নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেতে হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট দল অন্য দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে পারলেও নিজেদের পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারে না। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়, আর সংশ্লিষ্ট আইনে নিবন্ধন বাতিলের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আরপিও-এর ৯০ জ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কী কারণে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।

(ক) দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি যদি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তি কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করা হয়; বা

(খ) নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়; বা

(গ) এই আদেশ ও বিধিমালার অধীন কমিশনে প্রেরিতব্য কোনো তথ্য [একাদিক্রমে তিন বৎসর] প্রেরণ করতে যদি কোনো দল ব্যর্থ হয়; বা

(ঘ) কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক [অনুচ্ছেদ ৯০খ এর দফা (১)(খ)] এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করা হয়; বা

(ঙ) কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে; তাহলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।

অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে আরপিও-এর ৯০জ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফা অনুযায়ী, সরকারের নিষেধাজ্ঞা আলোকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধি করতে পারে ইসি।

অন্যদিকে এই অনুচ্ছেদের (ঘ) দফা অনুযায়ীও [যা ৯০খ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফাতে বর্ণিত] দলটির নিবন্ধন বাতিল করা যাবে। কেননা, ওই দফায় (১)(ক) দফাও প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে। আর ৯০খ অনুচ্ছেদের ১ এর (ক) এর (ই) দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয় থাকতে হবে।

এ ছাড়াও কমিশন থেকে চাহিদা মোতাবেক কোনো তথ্য পরপর তিন বছর কোনো দল না দিতে পারলে; ২০৩০ সালের মধ্যে দলের সকল স্তরের ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণ করতে না পারলে; শিক্ষক, ছাত্র, আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের বা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন করলে প্রভৃতি কারণে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।

সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য কোনো শুনানির প্রয়োজন নেই। তবে অন্য কোনো কারণে নিবন্ধন বাতিল করতে হলে সংশ্লিষ্ট দলকে শুনানির সুযোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে আইনে। এ ছাড়া নিবন্ধন বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট নামে অন্য কোনো দল আর পরবর্তী নিবন্ধন পাবে না এবং নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ হলে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে।

উল্লেখ্য, শনিবার (১০ মে) জরুরি বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয়।

সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের গেজেটটা হলে আমরা আগামীকাল (১২ মে) কমিশন বৈঠক করবো। আমি একা তো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এটার আইন আছে সরকার কোনো দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলে কী করতে হবে। গেজেটটা হোক, কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা কেবল নিবন্ধন বাতিল করতে পারি। কার্যক্রম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। কাজেই গেজেটটা পেলেই আমরা বৈঠকে বসব। এজন্য সরকার থেকে ইসিতে কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন হবে না।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে