ঢাকা, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
Sharenews24

ছদ্মবেশে যেভাবে দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি

২০২৫ মে ১১ ১১:০৯:২৫
ছদ্মবেশে যেভাবে দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জনরোষ এড়িয়ে ছদ্মবেশে দেশ ছেড়ে গেছেন। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান। এ সময় তার পরনে ছিল লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মুখে মাস্ক—পুরোপুরি ছদ্মবেশে। পরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা সংস্থার সহযোগিতায় কঠোর গোপনীয়তায় তাকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত গাড়িটি বিমানবন্দরের গেট আটকে দেওয়ার পর তার পরিচয় যাচাই করতে চান নিরাপত্তা বাহিনী। তবে গাড়িচালক জানায়, গাড়িতে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার রয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এসে জানিয়ে দেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগ অনুমোদিত। এরপর দ্রুতই তাকে টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়।

ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছেই আবদুল হামিদ গাড়িতে বসেই পোশাক বদল করেন। পরে প্যান্ট-শার্ট পরে উপ-প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষে অবস্থান নেন। সেখানে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয় এবং ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পর তাকে বিমানে তোলা হয়।

থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নম্বর TG340-এর উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে তাকে বিশেষ গাড়িতে করে ১২ নম্বর আউট-বেতে নেওয়া হয়। বিমানে ওঠার কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গে ছেলে রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ডা. এনএম নওশাদ খানও বোর্ড করেন। তারা সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করলেও আবদুল হামিদ কূটনৈতিক লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবদুল হামিদ ইমিগ্রেশন কাউন্টারে উপস্থিত হননি। নিয়ম অনুযায়ী, কূটনৈতিক পাসপোর্ট হলেও উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। তবে গোপনে সব কিছু সম্পন্ন করে তাকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। কেউ মুখ খোলেনি—যা ঘটনাটিকে ঘিরে সন্দেহ বাড়িয়ে তুলেছে।

আবদুল হামিদের পাসপোর্ট নম্বর D00010015, যেটি ২০২০ সালে ১০ বছর মেয়াদে ইস্যু করা হয়। যদিও একই সময়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অন্যদের লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়, তবে তারটি কেন বহাল রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পাসপোর্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতিরা আমৃত্যু বিচারপতির মর্যাদা পান এবং আইনে লাল পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। সরকারের চাওয়ার ওপর নির্ভর করে এটি বাতিল করা যেত।

সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের গন্তব্য ব্যাংকক দেখানো হলেও তার টিকিট ছিল ভারতের দিল্লি পর্যন্ত। ১৬ জুন দেশে ফেরার টিকিটও আগে থেকেই কনফার্ম করা। তবে তিনি আদৌ ফিরবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই।

বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিল পুলিশের বিশেষ শাখা, এভসেক, সিএএবি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি। তবে কারও পক্ষ থেকেই সরাসরি কোনো বাধা কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ হয়নি। গোটা বিষয়টি এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যাতে কোনো প্রশ্নই না ওঠে—কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই হয়েছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে