ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
Sharenews24

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত, তবুও বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ বিভাগের দায়িত্বে তিনি

২০২৫ মে ০৬ ০৯:৪৫:৩৮
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত, তবুও বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ বিভাগের দায়িত্বে তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মেজবাউল হককে একযোগে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সাইবার হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর তিনি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে গোপনে বিদেশি দুই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুরক্ষিত আইটি রুমে প্রবেশ করান এবং আলামত নষ্ট করার সুযোগ দেন। এই বিষয়ে সিআইডির তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ দায়িত্ব বণ্টন তালিকায় দেখা গেছে, তাকে হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ ও ২, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি), ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন (ডস), সচিব বিভাগ এবং ইইএফ ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় দ্বৈত ভূমিকার বিপদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিআরপিডি যেখানে নীতিমালা তৈরি করে, সেখানে ডস সেই নীতির কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ করে। এই দুটি বিভাগ এক ব্যক্তির আওতায় থাকা সাংঘর্ষিক এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরিপন্থী। অতীতে কখনোই এই তিনটি বিভাগ একসাথে একজন ইডির অধীনে দেওয়া হয়নি বলেও তারা দাবি করেন।

তারা আরও জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর মেজবাউল হক নিজের পছন্দের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে শুরু করেছেন। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্বস্তি ও ক্ষোভ বাড়ছে।

মুখপাত্রের ব্যাখ্যা

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ডস ও বিআরপিডি একই ব্যক্তির হাতে থাকা স্থায়ী নয়। আরও দুজন নির্বাহী পরিচালক যোগ দিলে এই দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করা হবে।

বিতর্কিত অতীত

মেজবাউল হক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টে দায়িত্বে ছিলেন। সে সময়েই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটর ‘নগদ’ নিয়ম বহির্ভূতভাবে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি পায়। ২০১৮ সালের প্রবিধান অনুযায়ী এমএফএস পরিচালনার জন্য কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু নগদ সেই শর্ত পূরণ করেনি। পরে ২০২২ সালে নতুন প্রবিধানে শর্ত শিথিল করা হলেও, নগদ তখনও কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।

নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডাক বিভাগের নামে দাবি করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে নগদে সরকারি কোনো অংশীদারিত্ব নেই। অথচ আইনে বলা আছে, সরকারিভাবে অন্তত ৫১% শেয়ার এবং বোর্ডে নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।

তদন্তে অনিয়ম ও অর্থপাচার

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক বসায়। প্রশাসনের নেতৃত্বে পরিচালিত তদন্তে প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকা পাচার ও ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি সংক্রান্ত অনিয়ম ধরা পড়ে। এই সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মেজবাউল হকের আগের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে এখন আরও প্রশ্ন উঠছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এমন বিতর্কিত ও তদন্তাধীন একজন কর্মকর্তাকে একাধিক নীতি ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এতে কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা নয়, দেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে