ঢাকা, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের পর বাংলাদেশ যে উদ্যোগ নিল

২০২৫ এপ্রিল ২০ ১০:৩৮:১১
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের পর বাংলাদেশ যে উদ্যোগ নিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের মাধ্যমে চার বছর ধরে চলা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই রুটটি, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময়, একটি বিকল্প লজিস্টিক লাইফলাইন হিসেবে কাজ করেছিল—যার মাধ্যমে ঢাকা বিমানবন্দরের অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত ও কম খরচে রপ্তানি করা সম্ভব হতো। কিন্তু এই সুবিধা না থাকায় এখন দেশের ভরসা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল।

তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। এই আধুনিক টার্মিনাল চালু হলে বছরে প্রায় ৫ লাখ ৪৬ হাজার টন কার্গো সামগ্রী হ্যান্ডেল করা যাবে, যা বর্তমানে দেশে বিদ্যমান অবকাঠামোর চেয়ে অনেক বেশি।

নতুন টার্মিনালে থাকবে একটি ৩৬ হাজার বর্গমিটারের বিশেষায়িত কার্গো জোন, যা আধুনিক স্ক্যানিং, পণ্য পরীক্ষা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত স্টোরেজ সুবিধা সম্বলিত।

বেবিচক চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, “এই টার্মিনাল শুধু সক্ষমতা বাড়াবে না, এটি আমাদের স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ এনে দেবে। ফলে রাজস্বও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।”

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সপ্তাহে প্রায় ৬০০ টন রপ্তানি পণ্য ভারতের দিল্লি ও কলকাতার বিমানবন্দর হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় যেত।

এই রুটটি ব্যবহার করে পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারকরা খরচ কমাতে এবং পণ্য দ্রুত পাঠাতে পারতেন। এখন এই সুবিধা বন্ধ হওয়ায় অনেকেই উদ্বিগ্ন।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বর্তমান কার্গো ভিলেজের ধারণক্ষমতা প্রতিদিন মাত্র ৩০০ টন। অথচ এখনকার দিনে এটি দিনে ১২০০ টন পর্যন্ত পণ্য হ্যান্ডেল করে। ফলে পণ্যের ট্রানজিটে দীর্ঘ বিলম্ব, খোলা জায়গায় রাখা এবং ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।

সাথে আছে অতিরিক্ত খরচ ঢাকায় প্রতি কেজি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে খরচ হয় ৩৫ টাকা (০.২৯ ডলার), যেখানে দিল্লিতে খরচ মাত্র ৬ টাকা (০.০৫ ডলার)।

বিমান বাংলাদেশের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) বুশরা ইসলাম বলেন, “জেট ফুয়েল খরচ একটি বড় ফ্যাক্টর। ঢাকায় এটি ৩০% বেশি। যা রপ্তানির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।”

ঢাকা থেকে যেসব মালবাহী বিমান যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা খালি ফিরে আসে। অর্থাৎ তারা শুধুমাত্র পণ্য পাঠাতে পারছে, আনতে পারছে না। এর ফলে ফ্লাইটগুলো লাভজনক না হয়ে পড়ে।

অপরদিকে, ভারতের শহরগুলোতে ফ্লাইট দ্বিমুখী—পণ্য উভয়দিকে বহন করে। তাই সেগুলো কার্যকর ও লাভজনক। এতে ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনা কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

বাফার উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিজকিল গুলজার বলেন, “সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে ঢাকার ওপর চাপ কমবে এবং ভারতের রুটের বিকল্প তৈরি হবে।”

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, ভারতের মধ্য দিয়ে ১৫ মাসে ৪৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার অর্ধেকই পোশাক। সিলেট বা চট্টগ্রাম রুট চালু হলে এই পণ্যগুলো সহজেই দেশের ভেতর থেকেই পাঠানো যাবে।

খরচের ব্যবধান কমাতে রপ্তানিকারকরা সরকারি ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা চাচ্ছেন। বিমানবন্দর চার্জ, জ্বালানি খরচ, ওভারফ্লাইং ও পার্কিং ফি কমালে রপ্তানিকারকরা আবারও দেশে ফিরে আসবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল আপাতদৃষ্টিতে সমস্যার সৃষ্টি করলেও এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক অবকাঠামো থাকলে বাংলাদেশ নিজেই হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শক্তিশালী বিমান কার্গো হাব।

সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে নেওয়া পদক্ষেপগুলো সফল হলে রপ্তানিতে বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে পারবে।

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়া বাংলাদেশের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি সম্ভাবনা। তৃতীয় টার্মিনাল, বিকল্প বিমানবন্দর, ও সরকারি সহায়তা মিললে দেশ নিজেই হয়ে উঠতে পারে একটি স্বাধীন, আধুনিক, ও কার্যকর রপ্তানি লজিস্টিক হাব।

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে