ঢাকা, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে টেলিকম সেক্টরে সালমান এফ রহমানের থাবা

২০২৫ এপ্রিল ০৯ ১৩:৩১:৩৯
শেয়ারবাজারে টেলিকম সেক্টরে সালমান এফ রহমানের থাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেলিকম সেক্টরেও রক্ষা পায়নি সালমান এফ রহমানের প্রভাব। শেয়ারবাজারের মতো টেলিকম সেক্টরও কুক্ষিগত করেছেন তিনি, যেখানে প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আন্তর্জাতিক কল পরিচালনার জন্য নিয়োজিত আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরের ব্যবসা নিজের হাতে তুলে নিয়ে, সালমান ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং এখান থেকে পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

আইজিডব্লিউতে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তবে সালমানের প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। টাকা সংগ্রহের জন্য তিনি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত অপারেটরদের বাধ্যতামূলকভাবে তার প্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রেরণ করতে বাধ্য করেন।

এছাড়া, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সালমান সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, এবং আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানককে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স প্রদান করেন, যা নিয়ে বড় ধরনের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এই লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল এবং চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে, তবে এ বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলেনি। সালমান এফ রহমান ১৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের চাপ দিয়ে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। বিটিআরসি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুদকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী সাংবাদিকদের জানান, গেটওয়েতে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা ছিল। টেলিকম খাতে অনিয়মের এক অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয় এবং সালমান এফ রহমান একটি ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের বাইরে যেকোনো প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করলে তাদের পথে বাধা দেয়া হতো।

২০১২ সালে সালমান এফ রহমান ২৩টি বেসরকারি অপারেটরের মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আইজিডব্লিউ তৈরি করেন। এর মধ্যে সালমান নিজের নামে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিটিআরসি টিয়ার-২ অপারেটরদের নাম চূড়ান্ত করে ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, যার মধ্যে ছিল ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশনস, রুটস কমিউনিকেশনস, গ্লোবাল ভয়েস, মীর টেলিকম, বাংলা ট্র্যাক এবং নভো টেলিকম।

সূত্র জানায়, সালমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো কম্পিউটার লিমিটেড ২৪৯ বার টাকা প্রেরণ করেছে, বাংলাট্রাক ২৫ বার, গ্লোবাল ভয়েস টেলিকম ৪২ বার, ডিজকন ২৫ বার, এবং ইউনিক ইনফোওয়ে ১ বার টাকা পাঠিয়েছে। তবে, ২০১৩ সালে ডিজিকন টেলিকমের লাইসেন্স বিটিআরসি রাজস্ব না দেয়ার কারণে ব্লক করা হয়। রুটস কমিউনিকেশনের মালিকানায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান গোলাপের স্ত্রী।

এছাড়া, একটি 'মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড' করা হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। জানাগেছে, সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে টিয়ার-২ অপারেটরের সিন্ডিকেট প্রতি মাসে নেটওয়ার্ক উন্নয়নের নামে ১০% হারে অর্থ কেটে নিয়েছে, যার পরিমাণ ৬২৫ কোটি টাকা। তবে, এই অর্থ কোথায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। আইজিডব্লিউ অপারেটরদের রাজস্বের ৪০% বিটিআরসি, ১৭.৫% আইসিএক্স এবং ২২.৫% এএনএসকে পরিশোধ করা হয়, কিন্তু ৯ বছরের মধ্যে আইওএস অপারেটররা নন-আইওএস অপারেটরের চেয়ে অনেক বেশি আয় করেছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে অনেক অপারেটর আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে