ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা: রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিভক্তি ও দাবি

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১১:৪১:৫৭
নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা: রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিভক্তি ও দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : এ বছরের ডিসেম্বরের শেষার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার চিন্তা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

তবে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চাইলেও জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পক্ষে নয়। তারা চায় প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হোক। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটি ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন নয়, গণপরিষদ নির্বাচন চায়।

এ অবস্থায় আগামীকাল শনিবার থেকে ছয়টি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই আলোচনা কত দিন চলবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি পথনকশা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ জন্য ১১টি সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এসব প্রস্তাব নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের’ সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে আগামীকাল থেকে। বিএনপি সূত্র জানায়, মূলত নির্বাচন প্রশ্নে যাতে দলগুলো অভিন্ন অবস্থান নেয়, সে লক্ষ্যে এসব আলোচনা চলছে। পাশাপাশি নির্বাচনে আসন সমঝোতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংস্কারে জোর দিলেও বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। এমন অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার না এলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের দাবি জোরালো হতে শুরু করেছে।

গত ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, অল্প সংস্কার করে নির্বাচন চাইলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে আর আরেকটু বেশি সংস্কার করে নির্বাচন চাইলে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।

ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসি সূত্র জানায়, তারা মনে করছে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে। নির্বাচনের আগে মোটাদাগে বড় প্রস্তুতির মধ্যে আছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন এবং প্রয়োজনীয় কেনাকাটার মতো কাজগুলো শেষ করা। এগুলোর জন্য একটু লম্বা সময় প্রয়োজন হয়।

বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিচ্ছে। নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ কিছু দাবিতে গত বুধবার থেকে কর্মসূচি শুরু করেছে দলটি। পাশাপাশি সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জামায়াতে ইসলামীর বাইরে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গেও বিএনপির আলোচনা চলছে। বিএনপি সূত্র জানায়, মূলত নির্বাচন প্রশ্নে যাতে দলগুলো অভিন্ন অবস্থান নেয়, সে লক্ষ্যে এসব আলোচনা চলছে।

বিএনপির এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। স্থানীয়ভাবে কিছু আসনের প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তারা বিএনপির মতো নির্বাচনের জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পক্ষে নয়।

গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। চলতি মাসের মধ্যে এই দল আত্মপ্রকাশ করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা এই দলের নেতৃত্বে থাকছেন। তাঁরা নির্বাচনের আগে সংস্কারের পক্ষে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকে সংস্কারের আগে সংসদ নির্বাচন না দেওয়ার কথা বলে আসছে। তারা মনে করছে, দেশে সংস্কার আনতে হলে সবার আগে সংবিধান সংস্কার প্রয়োজন। সংবিধান সংস্কার না করে জাতীয় নির্বাচন করা হলে সংস্কারের লক্ষ্য ব্যাহত হবে। তাই আগে গণপরিষদ নির্বাচন করে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। এরপর নতুন সংবিধানের আলোকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার হোক। পরবর্তী সংস্কারগুলো একটি নির্বাচিত সরকারকে অবশ্যই করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকেও এমন বক্তব্য আসছে। এখানে আশার কথা হলো, সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ, আলোচনা হচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কার না করে সংসদ নির্বাচন দিলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে। এ ছাড়া বর্তমান সংবিধান বহাল রেখে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য আগে গণপরিষদের নির্বাচন হতে হবে। আমরা আগামী ডিসেম্বরে গণপরিষদ নির্বাচন চাই।’

ফারহানা/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে