ঢাকা, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

এস আলম গ্রুপের ২৪ জনের নাম প্রকাশ: ইসলামী ব্যাংকের কোটি টাকা লুট

২০২৫ জানুয়ারি ২৬ ১৭:৪২:৫৯
এস আলম গ্রুপের ২৪ জনের নাম প্রকাশ: ইসলামী ব্যাংকের কোটি টাকা লুট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের লাখ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন তথ্য এসেছে, যেখানে এস আলম গ্রুপের অন্তত ২৪টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রকাশ পায়, এস আলম গ্রুপ ইসলামি ব্যাংক থেকে লাখ কোটি টাকা ঋণের নামে লুটপাট করেছে, যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এই অর্থের অধিকাংশই বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এস আলম গ্রুপ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা, পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ ২৪ জনের নামে বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে, এবং ঋণের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়নি। সেই অর্থ বিদেশে পাচার করার প্রমাণও মিলেছে।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, ভাই ওসমান গনি ও গনির স্ত্রী ফারজানা বেগম, ভাই আবদুস সামাদ ও তার স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস, ভাই সহিদুল আলম ও তার স্ত্রী শারমিন ফাতেমা, সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আতিকুর নেছা, ভাই মোরশেদুল আলম ও তার স্ত্রী লুৎফুন নাহার, মোরশেদুলের পুত্র ফসিহুল আলম ও মাহমুদুল আলম, অজ্ঞাত মিসকাত আহমেদ, সাইফুল আলমের পুত্র আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম, বোন বদরুননেসা আলম, জামাতা বেলাল আহমেদ, কন্যা মায়মুনা খানম, বোন সাজেদা বেগম, বোনের ছেলে মোস্তান বিল্লাহ আদিল ও তার মা আলহাজ চেমন আরা বেগম।

ইসলামী ব্যাংকের মোট ১৭ জন পরিচালকের মধ্যে নমিনেটেড পরিচালকের সংখ্যা ছিল ১৩ জন। যার মধ্যে এস আলম গ্রুপের বেনামি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নমিনেটেড পরিচালকের সংখ্যা ছিল ১২ জন। এ ছাড়া একজন বিদেশি শেয়ারহোল্ডারের নমিনেটেড পরিচালক এবং অবশিষ্ট চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক। অর্থাৎ ব্যাংকটির ওপর এস আলমের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব ছিল। ফলে এস আলম ব্যাংকটির ওপর তথা ব্যাংকিং খাতের ওপর সীমাহীন প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়েছিল। এসব কারণে সুযোগ পেয়ে গ্রুপটি ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করেছে। একই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য ব্যাংকে লুটপাট চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকে তাদের সিন্ডিকেট কাজ করেছে।

ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ২৮ হাজার ৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার ফান্ডেড এবং ছয় হাজার ১৭৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার নন-ফান্ডেডসহ মোট ৩৪ হাজার ২৫৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বেনামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২১ হাজার ৭৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকার ফান্ডেড এবং এক হাজার ২৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার নন-ফান্ডেডসহ মোট ২২ হাজার ৭৭০ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংক থেকে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের দেওয়া ঋণের প্রায় সমপরিমাণ আর্থিক সুবিধা এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওই সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেছে। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২৬ (গ) (২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বা তাদের স্বার্থের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ-সুবিধার মোট পরিমাণ ব্যাংক-কোম্পানির টিয়ার-১ মূলধনের শতকরা ১০ ভাগের অধিক হবে না।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এসব ঋণ সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব অর্থ চুরি করা হয়েছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের সমর্থন ও সহযোগিতায় এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুদক জানিয়েছে, এই ব্যাপারে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে