ঢাকা, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

অর্থনীতির সংকটে তারকাদের নেতৃত্ব: সংকটময় সময়ে দেশের প্রত্যাশা

২০২৫ জানুয়ারি ২৬ ১৬:৪১:০৮
অর্থনীতির সংকটে তারকাদের নেতৃত্ব: সংকটময় সময়ে দেশের প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন সরকারের নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি নিয়ে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর সহকর্মী অর্থনীতিবিদরা—ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ড. আহসান এইচ মনসুর—এবং ব্যবসায়ী নেতা শেখ বশির উদ্দিন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধ করার জন্য নিরলস চেষ্টা করছেন। তবে তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতির মূল সূচকগুলোর উন্নয়ন হয়নি, এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। চলুন বিশদভাবে দেখি কী ঘটছে।

বর্তমান সরকারের নীতি এবং কৌশলে কিছুটা গতি হারানোর কারণে, দেশের শিল্প খাত সংকটে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছাড়িয়ে গেছে, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং ঋণের উচ্চ সুদহার শিল্পের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অবস্থা সত্ত্বেও দেশের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৭১ শতাংশ কমে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ থেকে বেড়ে ২৬ লাখ ছাড়িয়েছে। উচ্চ সুদের হার এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। অনেক বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে চাকরি হারিয়েছে হাজার হাজার কর্মী।

দেশে মুদ্রার প্রবাহ কমে গেছে, বিশেষ করে রেমিট্যান্সের পরিমাণেও কমতি দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সরকার বিদেশে পাচার হওয়া প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু এখনো এর সাফল্য সীমিত।

আইএমএফের চাপের কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ের জন্য ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে, এর ফলে ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়ছেন। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি এবং আমদানি খরচ বৃদ্ধির ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ধুঁকছেন। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, এবং অনেক ব্যবসায়ী কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

বিভিন্ন শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, রপ্তানি খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বিদেশি ক্রেতারা সুরক্ষিত না থাকায় অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করেছেন, ফলে দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। বিশেষ করে পুঁজিবাজারের পতন এবং আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতির কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি যখন ক্রমেই অনিশ্চিত, তখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে রপ্তানি বাজারেও চাপ পড়েছে। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক বিক্ষোভ এবং অন্যান্য সমস্যা তৈরি হয়েছে, যার ফলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিল বা প্রতিবেশী দেশে সরিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিবিদরা সরকারের কাছে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে:

- আইএমএফের শর্তে কিছুটা নমনীয়তা,

- ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির আগে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা,

- উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করতে সুদের হার কমানো,

- স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া,

- আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা,

- পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনা,

- পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এই সংকট মোকাবিলায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরকারের সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নীতিনির্ধারকদের নয়, মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবে এটি সম্পূর্ণ অস্থির নয়। সঠিক সিদ্ধান্ত, কার্যকর নীতি গ্রহণ, এবং ব্যবসায়ীদের আস্থায় এনে সঠিক পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার উন্নতির পথে ফিরতে পারে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে