ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে স্বতন্ত্র কাউন্সিল, পৃথক সচিবালয়ের উদ্যোগ

২০২৫ জানুয়ারি ২১ ২২:২৯:২৫
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে স্বতন্ত্র কাউন্সিল, পৃথক সচিবালয়ের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার একটি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। একইসাথে আলাদা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর জন্যও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল আজ বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ

‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন থেকে একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিলের আন্ডার এ পরিচালিত হবে। ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ নামে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবে প্রধান বিচারপতি। কমিটিতে আপিল বিভাগের একজন কর্মরত ও একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

কাউন্সিলের কার্যক্রম

১. কাউন্সিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্ভাব্য বিচারক প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করবে।

২. সাধারণ নাগরিক বা আইনজীবীগণও কাউকে প্রস্তাব করতে পারবেন অথবা নিজেই আবেদন করতে পারবেন।

৩. প্রাথমিক যাচাইয়ের পর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আরও অন্যান্য সদস্যরা প্রবীণ বিচারকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।

কাউন্সিল প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করে বিচারক পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করবে। প্রার্থীর বয়স ৪৫ বৎসরের কম হতে পারবে না।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয়ের উদ্যোগ

আইন উপদেষ্টা আরও জানান, পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি জাতীয় ঐকমত্যে পরিণত হয়েছে, যা সমাজে দীর্ঘদিনের দাবি। এ উদ্দেশ্যে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের উদ্যোগ

সরকারি কৌঁসুলিদের ভূমিকা আরও নিরপেক্ষ ও দক্ষ করতে ‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালু’ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমানে দলীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়ার কারণে অনেক কৌঁসুলি নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন, যা দূর করার লক্ষ্যে এই সার্ভিস চালু করা হবে।

আইন উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন সম্পন্ন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আইন মন্ত্রণালয়ের সেবা ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৩৬ ধরনের কাগজপত্র অনলাইনে সত্যায়নের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যা জনগণের হয়রানি কমাতে এবং সেবার গতি বাড়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘উচ্চ আদালতে যোগ্য বিচারক নিয়োগ না হলে দেশের ১৭ কোটি মানুষের মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। নতুন এই আইন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে, যা দীর্ঘদিনের দাবি।’

এই উদ্যোগগুলো দেশের বিচার ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনবে এবং জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার আরও সুসংহত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে