ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

গণভবনে কি পাওয়া গেল? টিউলিপ সিদ্দিক, সোনার কলম এবং লুটপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য

২০২৫ জানুয়ারি ১৪ ১০:৩৩:০০
গণভবনে কি পাওয়া গেল? টিউলিপ সিদ্দিক, সোনার কলম এবং লুটপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি আবাস, গণভবন, পরিদর্শন এবং সেখানে পাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের কথা আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি যেভাবে গণভবনের বর্তমান অবস্থা, তার ভেতরে পড়ে থাকা বিভিন্ন জিনিস এবং টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত উপাদানগুলো তুলে ধরেছে, তা যথেষ্ট আলোচনার সৃষ্টি করতে পারে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, গণভবন কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। ৫ আগস্ট, ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়েন এবং ভারতে চলে যান। এর পর গণভবনে ব্যাপক লুটপাট চলে, যার ফলে এখানে অনেক মূল্যবান ও ব্যক্তিগত জিনিস পড়ে থাকে। যদিও বর্তমানে গণভবন সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে, সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। গত শনিবার একটি প্রতিবেদক অনুমতি নিয়ে গণভবনে প্রবেশ করেন এবং সেখানে অনেক অমূল্য বস্তু পড়ে থাকতে দেখা যায়।

গণভবনে পাওয়া যায় নানা ধরনের পরিত্যক্ত বস্তু। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের প্রচারপত্র, লেবার পার্টির পোস্টার, দামি কলমের মোড়ক, বিদেশি উপহারদাতা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া পোশাক, গয়না এবং তৈজসপত্র। বিশেষভাবে, টিউলিপ সিদ্দিকের প্রচারপত্র এবং সোনার প্রলেপযুক্ত মন্টব্ল্যাঁ কলম উল্লেখযোগ্য, যার একেকটির দাম দেড় হাজার ডলার। আরও পাওয়া গেছে একটি হীরার মান যাচাইয়ের সনদ, যা প্রমাণ করে যে এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের সম্পদ ছিল।

এছাড়া, বিদেশি গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনার শাসনামল সম্পর্কিত আইনি পরামর্শও সেখানে পড়ে ছিল, যা গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশ আটকে দেয়ার উদ্দেশ্যে ছিল। এসব সনদ ও কাগজপত্রের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট এবং শেখ হাসিনার শাসনের সময়কার দুর্নীতির সন্দেহগুলো সামনে আনে।

টিউলিপ সিদ্দিক, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের মন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কের কারণে। প্রতিবেদনটি বলে, টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি ও তাঁর পরিবার যুক্তরাজ্যে এমন কিছু সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন, যা শেখ হাসিনার শাসনামলের কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্কিত। এতে একটি অফশোর কোম্পানি এবং পানামা পেপারসের উল্লেখ করা হয়েছে, যা টিউলিপের সম্পত্তির প্রশ্নকে আরও জটিল করে তোলে।

এছাড়া, টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে, যেমন যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী আইনজীবী ‘গুম’ হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তিনি বরাবর দাবি করেছেন যে কখনোই তার খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

গণভবনের বিভিন্ন কক্ষে আরও পাওয়া গেছে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উপহার এবং রাজনৈতিক স্মারক। যেমন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিয়ান কাসটেক্স থেকে পাওয়া উপহার, একাধিক জাতিসংঘের বিজনেস কার্ড, ববির (টিউলিপের ভাই) মুঠোফোনের বিলের কাগজ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সময়ের কূটনৈতিক তারবার্তা।

এছাড়া, গণভবনের গ্রাফিতির মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার ভারতপ্রীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা দেশের রাজনীতির একটি বিতর্কিত বিষয়।

গণভবন এখন সংস্কৃতির অংশ হিসেবে একটি জাদুঘরে রূপান্তরের পরিকল্পনা চলছে, যেখানে জনগণ ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে শিক্ষিত হতে পারবেন। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যিনি জানিয়েছেন যে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে দেশ-বিদেশের মানুষকে সতর্ক করা হবে।

এই প্রতিবেদনটি গণভবনের বর্তমান অবস্থার পাশাপাশি শেখ হাসিনার শাসনামল, টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনৈতিক কার্যকলাপ, এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগের ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করেছে। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করতে পারে, কারণ গণভবনে পাওয়া অনেক উপাদান দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে