ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের দরপত্রের  বিশেষ শর্ত নিয়ে প্রশ্ন

২০২৫ জানুয়ারি ০৭ ১২:১৫:৩৯
প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের দরপত্রের  বিশেষ শর্ত নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু) এবং তাঁর 'ভাই-বন্ধু' চক্রের বিরুদ্ধে নতুন এক অভিযোগ উঠে এসেছে। অভিযোগে বলা হচ্ছে, প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের একটি দরপত্রে এমন শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণকে ঠেকাতে সহায়ক। দরপত্রে 'স্মার্ট প্রিপেইড মিটার' শব্দটি যোগ করা হয়েছে, যা বিশেষ করে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুবিধাজনক, যারা আগে থেকেই এই ব্যবসায় জড়িত।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় প্রিপেইড মিটার সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। একইভাবে, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২১ জেলায়ও মিটার সরবরাহের জন্য দরপত্র ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু, মিটার সরবরাহকারী কোম্পানির নির্বাচনে এমন কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যার কারণে সাবেক সরকারের সময় থেকে মিটার সরবরাহ করা কিছু প্রতিষ্ঠানের সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

তথ্য অনুযায়ী, নেসকো এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজিপিডিসি) সম্প্রতি দুটি দরপত্র আহ্বান করেছে। এর মধ্যে বিশেষ করে ওয়েস্ট জোনের একটি দরপত্রে 'স্মার্ট প্রিপেইড মিটার' স্থাপনের জন্য যে শর্তগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তা মূলত কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুবিধা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে, প্রিপেইড মিটার সরবরাহের জন্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ভাই-বন্ধুদের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাধান্য পেতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষত, 'স্মার্ট প্রিপেইড' মিটার স্থাপনের অভিজ্ঞতা বা প্রযুক্তির জন্য নির্দিষ্ট শর্ত এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যার ফলে আগের প্রকল্পগুলোর কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোই আবার সুযোগ পাচ্ছে। এ বিষয়ে শামসুল আলম, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক, জানান, তাঁরা চেয়েছিলেন নতুন কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে, তবে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে দরপত্র বাতিল করার সুযোগ রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে নানা প্রকল্পে কাজ পেয়েছিল শেনজেন স্টার, ওয়াসিওন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যারা নসরুল হামিদের 'ভাই-বন্ধু' চক্রের অংশ ছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধিরা ওই সময়ে ব্যাপকভাবে ব্যবসা লাভ করেছিলেন। বর্তমানে, এসব প্রতিষ্ঠানই আবার দরপত্রে অংশগ্রহণ করছে এবং বিশেষ শর্তের কারণে অন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানির জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠছে।

বর্তমানে, সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এই ধরনের দরপত্রের শর্ত যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বিশেষভাবে তৈরি হয়, তবে তা বাতিল করা হবে। তাঁর মতে, দরপত্রের প্রক্রিয়া সবার জন্য উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে প্রকৃত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা যায় এবং সব প্রতিষ্ঠান সমান সুযোগ পায়।

এই অভিযোগগুলো, যদি প্রমাণিত হয়, তা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। বিদ্যুৎ খাতের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে এমন দরপত্র শর্তগুলোর পূর্ণ পুনঃমূল্যায়ন প্রয়োজন হতে পারে। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা বা পক্ষপাতিত্বের বিষয় থাকলে তা বাতিল করা হবে।

কেএইচ

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে