ঢাকা, সোমবার, ৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

জটিল জনপ্রশাসন: ওএসডি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়নে ২০২৪ এর বিপর্যয়

২০২৫ জানুয়ারি ০৪ ২০:৫১:০৪
জটিল জনপ্রশাসন: ওএসডি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়নে ২০২৪ এর বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের জনপ্রশাসনে একটি ঘটনাবহুল বছর ছিল, যা বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনায় এসেছে। বছরের শুরুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার, যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জনগণের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে ব্যাপকভাবে জনপ্রশাসনে পরিবর্তন আনে।

মূল ঘটনা:

১. চুক্তি বাতিল ও কর্মকর্তাদের বদলি: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, সরকারি অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশেষত আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজনদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় শতাধিক কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে এবং ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে নিয়োগ দেয়। এছাড়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণ করেন।প্রথম তিন মাসে প্রায় ৮০ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয় এবং চারজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়।

২. বদলি ও পদোন্নতি: ২০২৪ সালের অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম তিন মাসে এক হাজার ৮৭০ কর্মকর্তাকে বদলি করে এবং ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়। তাদের মধ্যে সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, উপসচিব এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। এই পদোন্নতি এবং বদলি সরকারের শক্ত অবস্থান ও প্রশাসনিক শুদ্ধি অভিযানকে নির্দেশ করে।

৩. নতুন ডিসি নিয়োগ: নতুন সরকার দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয়। তবে, এই নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তারা শোরগোল শুরু করেন, যার ফলে ১২ সেপ্টেম্বর ৯ জন ডিসির নিয়োগ বাতিল হয় এবং চার জেলার ডিসি পদে রদবদল করা হয়।

৪. বিভিন্ন দাবিতে প্রতিবাদ: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অন্যান্য দাবির মধ্যে কর্মকর্তাদের বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণের দাবি ছিল। এর ফলে সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে, যা স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জন্যও কার্যকর হয়।

৫. সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশনা: দুর্নীতি রোধে এবং সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য, অন্তর্বর্তী সরকার কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। এই নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় এবং পাঁচ বছর পরপর তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণী জমা দিতে হবে।

৬. নির্বাচনী সংশোধন: সরকারের পতনের পর নির্বাচনী সংস্কারের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যার মধ্যে শুদ্ধি অভিযান এবং প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা ছিল মূল লক্ষ্য।

সামগ্রিক অবস্থা: ২০২৪ সালের ঘটনায় জনগণের মধ্যে প্রশাসনিক সংস্কারের একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সরকার পতন, এবং নতুন সরকারের পদক্ষেপ প্রশাসনিক শুদ্ধি অভিযান, বদলি, নিয়োগ এবং পদোন্নতির মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে।এবং এই পদক্ষেপগুলো জনপ্রশাসনের কাঠামোতে এক নতুন দিশা এবং পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দেয়।

কেএইচ

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে