ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শেয়ার কারসাজি দূর করা সম্ভব: অর্থসচিব

২০২৪ নভেম্বর ২৫ ২৩:৩৯:৫৩
ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শেয়ার কারসাজি দূর করা সম্ভব: অর্থসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে শেয়ার কারসাজি দূর করা সম্ভব। এই বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কাজ করবে বলে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।

আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন সেমিনারে অর্থ সচিব বলেন, সরকার সহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সবাই ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। এখন ব্যাংকগুলোর অবস্থা শোচনীয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য শেয়ারবাজারে আসতে হবে, এজন্য মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।

নাজমা মোবারক আরও বলেন, আইসিবি সরকারের পক্ষে কাজ করছে। বিএসইসি রেগুলেশন নিয়ে কাজ করছে। আইসিবিকে যে ৩ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে, তা শেয়ারবাজারের প্রতি সরকারের পজিটিভ চিন্তার ফল।

বিএসইসি কমিশনার আলী আকবর বলেন, শেয়ারবাজারে অনেকগুলো আইন রয়েছে। কমিশন অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা এখন কেউ বলতে পারবো না যে, আমরা চাপে আছি। এমন পরিস্থিতিতে যার যার যায়গা থেকে শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে না পারি তাহলে সবার ব্যর্থতা হবে। এখন থেকে শেয়ারবাজার তার নিজের গতিতে চলবে।

আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন অনেক ক্ষেত্রে ভূয়া। এসব তথ্য প্রকাশের পর দেখা যায় শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এরপর দেখা গেলো আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য সঠিক না। কিছু প্রণোদনা ছাড়া ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনা কঠিন। সরকার কোথাও কোনো টাকা দিতে চায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বেশি দিতে চায়না। এরপরও পুঁজিবাজারের জন্য আইসিবিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। মার্কেটের সমস্যাগুলো অনেক আগেই চিহ্নত করা হয়েছে।

আইসিবিকে টাকা দিলে শেয়ারবাজারের স্বার্থে ব্যাবহার করা হবে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সুদের হার কমতে পারে। আর সুদের হার কমলে শেয়ারবাজারে টাকা আসা শুরু করবে বলেও মনে করছেন আইসিবি চেয়ারম্যান।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আমাদের বড় দুর্বলতা। এরজন্য সরকারকে অর্থের জন্য ব্যাংক খাতের উপর নির্ভরতা বাড়ছে। আমাদের এখানে আইন বেশি হয়, তবে এর প্রয়োগ কম হয়। পুঁজিবাজারে কোনো সুশাসন নেই। বাজারে বিনিয়োগ না হলে ভালো কোম্পানি কেন আসবে। আইপিওর প্রাইসিং পলিসি নিয়ে টাস্কফোর্সের কাজ করা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, সিঙ্গেল ব্রোয়ার এক্সপোজার ঝুঁকির সঙ্গে জড়িত। বাজার স্থিতিশীল হলে এক্সপোজার উঠিয়ে আরও বাড়ানো হতে পারে। ব্যাংকগুলো ফাইন্যান্স করার আগে দেখে, ইক্যুয়েটি পার্টিসিপ্যান্ট কতটুকু। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার ভালো করতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তত।

বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন বলেন, বিএমবিএ পুঁজিবাজারের চাহিদা ও যোগান দুই পাশেই কাজ করে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। নতুন বাংলাদেশে যাতে করে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা হয় এজন্য আজকের এই আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মুমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের টেকনোলজিতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। তবে ৫ বছর পরে দেখা গেলো পুঁজিবাজারে ডিমিউচুয়ালাইজেশনে দেখা গেছে চাহিদা পূরণ হয়নি। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় আর্থিক অবস্থা দেখে। তবে আমাদের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্বাস করার মতো কিনা সেটা নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত।

সিএসইর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এতদিন আমরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, সেগুলো আবারও বলছি। কারণ বিএসইসি কিছু রিফর্ম উদ্যোগ গ্রহণ করা হছে। সেই রিফর্মের মাধ্যমে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, দুই স্টক এক্সচেঞ্জে আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত হতে হয়। এতে খরচ বাড়ে বলেও আলোচনায় উঠে এসেছে। এজন্য আঞ্চলিক যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে চায় সেগুলো সিএসইতে লিস্টেড করা যেতে পারে। এছাড়া মূলধনের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোকে ভাগ করা যায় কিনা সেটি নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের সিইও সুমিত পোদ্দার বলেন, দেশের অর্থনীতিতে মানি মার্কেটের উপর নির্ভরতা বেশি। অথচ আমরা সবসময় বলি, পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন করার জন্য সরকারের সহায়তা দরকার।

সুমিত পোদ্দার আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্লোর প্রাইসের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বাজারে আর কখনো ফ্লোর ফেরত আসবে না এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এটা ভালো করে বুঝাতে হবে। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবারো আস্থা ফিরে পাবে। পাশাপাশি মার্কেট ডেভেলপমেন্ট করতে ফাইন্যান্সিয়াল লিটেরেসির দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।

বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি আকৃষ্ট করা যায়। ভারত এটি করে দেখিয়েছে। বিএসইসিও মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নয়ন করতে কাজ করছে। এরফলে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়বে। আমাদের দেশের বাজারে প্রাইস সেনসেটিভ তথ্যের উন্নতিতে কাজ করা দরকার। কারণ একটা কোম্পানি বিক্রি হবে বা বন্ধ হওয়ার একবছর আগেই সবাই জানতে পারে। তবে সেই তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জে সেই তথ্য জানানো হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে সব সমস্যা শুরু হয় ফাইন্যান্সিয়াল ডিসক্লোজার থেকে। ভুল তথ্যের উপর ভ্যালুয়েশন করা হয়। এটি যেন না হয়, সেজন্য ফরেন্সিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইকে দেওয়া উচিত। আমরা এখনো অডিট কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে পারিনি।

বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) অধ্যাপক আবু আহমেদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মন্ডল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কর নীতি) একেএম বদিউল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান (বিএসইসি) খন্দকার রাশেদ মকসুদ, বিএসইসির কমিশনার মহসিন চৌধুরী, আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, ফারুক আহমদ সিদ্দিকী।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মুমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মোর্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মিনহাজ জিয়া।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে