ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

দেশেই নেই তারা, তারপরও তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা!

২০২৪ অক্টোবর ০৮ ০৭:০৯:৪৪
দেশেই নেই তারা, তারপরও তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। এরপর ৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল সোমবার (০৭ অক্টোবর) পর্যন্ত এমপি-মন্ত্রী, আমলা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ বিগত সরকারের শতাধিক ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এমন অনেকেই আছেন, যারা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে ‘অকার্যকর’ এসব নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গণমাধ্যমের খবর ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে। সপরিবার সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলম। মূলত সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই দেশ ত্যাগ করেন তারা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল (সোমবার) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইদিন দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের ১৩ সদস্যের।

একই দিন দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে। আগের দিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে।

এর আগে ০১ সেপ্টেম্বর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খানসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার স্ত্রী ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছেন মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খান, ছেলে শাফি মোদ্দাছির খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মোল্যা নজরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেন।

এদিকে, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও শেয়ারবাজারের অন্যতম লুটেরা নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও তিনি দেশে আছেন কিনা, তা নিশ্চিত নয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুদকের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, একটি জাতীয় পত্রিকায় কয়দিন আগে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন নাফিজ সরাফাত। দেশে না থাকলে তিনি এ বিজ্ঞাপন দেয়া প্রয়োজন মনে করতেন না।

গত ২৯ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আট মন্ত্রী ও ছয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। আট মন্ত্রী হলেন জাহিদ মালেক, দীপু মনি, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাধন চন্দ্র মজুমদার, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কামাল আহমেদ মজুমদার, শাহজাহান খান ও কামরুল ইসলাম। ছয় সংসদ সদস্য হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সালিম উদ্দিন আহমেদ শিমুল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের জিয়াউর রহমান, ময়মনসিংহ-১১ আসনের কাজীম উদ্দিন আহমেদ, মাদারীপুর-১ আসনের নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, নোয়াখালী-৩ আসনের মামুনুর রশিদ কিরণ এবং খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরি ও মূসকের (ভ্যাট) সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর মধ্যে হেনরিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও তার স্ত্রী ফারহানা রহমানের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা আগেও দেখা গেছে। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও ছাগলকাণ্ডে আলোচিত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ক্ষেত্রেও এ চর্চা দেখা গেছে।

এক্ষেত্রে দুদক বলছে, দেশের বাইরে কেউ চলে গেলেই যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যাবে না, সে রকম নয়। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণ হলো যেন যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার দেশে ফিরলেও তাকে যেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করতে পারে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে