ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

আনার হত্যা: মরদেহ নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

২০২৪ জুন ১০ ১৯:৩১:১৩
আনার হত্যা: মরদেহ নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের লাশ পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানানো হবে। সোমবার (১০ জুন) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গিয়েছি। মরদেহের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই আমরা আপনাদের কাছে অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারবো। মরদেহ নিশ্চিত হওয়ার জন্য যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের জবানবন্দি শুনেছি। তারা বলেছে যে, মরদেহ তারা খণ্ডবিখণ্ড করেছে। কোথায় রেখেছে, সেটা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

তিনি বলেন, ভারত ও আমাদের গোয়েন্দারা সেখানে গিয়েছিল। সেখান থেকে তারা যেগুলো পেয়েছেন, সেগুলো উদ্ধার করেছেন। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হতে পারবো না যে এগুলো তাঁর মরদেহের অংশ।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। ২২ মে কলকাতা পুলিশ জানায়, আজীম খুন হয়েছেন।

একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানান, আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় একই দিন আজীমের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরুর পর আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে আজীমের মরদেহ পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতে মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুই দেশের পুলিশ।

এরমধ্যে ডিবির হেফাজতে আছে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সেলেস্তা রহমান ও তানভীর ভূঁইয়া। আর কলকাতা পুলিশের হেফাজতে আছেন জিহাদ হাওলাদার ও মো. সিয়াম হোসেন।

শিমুল, সেলেস্তা ও তানভীর এরই মধ্যে এমপি আজীমকে অহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন আমেরিকা পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কলকাতা পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার জিহাদ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আজীমের মরদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করার কাজটি মূলত সে–ই করেছে।

তদন্তের অংশ হিসেবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি কলকাতায় যায়। গত ২৮ মে বিকেলে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় ৪ কেজি মাংসের টুকরা উদ্ধার করে ডিবি ও কলকাতা সিআইডির যৌথ দল।

সে সময় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি আজীমের দেহাবশেষ। ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে পরে জানা যাবে এটি তাঁর দেহাংশ কিনা।

এদিকে গ্রেপ্তার সিয়ামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রোববার কলকাতা থেকে কিছু হাড় উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। তবে এগুলো এমপি আজীমের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এমপি আজীমকে অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার বাবুকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো বললাম, তদন্ত শেষ হোক। অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন। তদন্তের আগে আমার মনে হয়, এগুলো বলা উচিত হবে না।’

এ হত্যাকাণ্ডের মূল সন্দেহভাজন আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়া আক্তারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, মামলা দুটো হয়েছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি মামলা হয়েছে। সেটা হতেই হবে। আর ওই সংসদ সদস্যের মেয়ে ঢাকাতে একটি মামলা করেছেন, তার নিরুদ্দেশ হওয়ার পরেই। কাজেই এ ঘটনায় দুদেশই সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের (ভারত) দেশে যেহেতু ঘটনা ঘটেছে, আসামিকে ফেরত নেওয়া, বন্দি করার দায়িত্ব তাদের। আমি যতটুকু জানি, ভারতের সঙ্গে আমেরিকা বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সেক্ষেত্রে হয়ত সেই সুবিধা ভারত সরকার পাবে। আমাদের সঙ্গে আমেরিকার বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। তবে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।

তিনি বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সব কাজেই তারা সহযোগিতা করছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন।

এমপি আজীমের সংসদ সদস্য পদের কি হবে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সঙ্গত কারণেই এটা আসবে। আমাদের একটা প্রমাণ লাগবে যে এই খণ্ডবিখণ্ড মাংসগুলো তার। তার ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মেয়ের সঙ্গে যদি মিলে যায়, তাহলে ভারত সরকার আমাদের জানাবে, তখনই আমরা বলতে পারবো।’

সাধারণত কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে বা অনুমতি ছাড়া ৯০ কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এরপর এর গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবহিত করা হয়। ইসি তখন পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনে উপনির্বাচন আয়োজন করে।

সাধারণত কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যেই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়ে থাকে। সেই সদস্যের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেন স্পিকার। অধিবেশন চলাকালীন সময়ে কেউ মারা গেলে ওই দিনের জন্য সংসদ মুলতবি করার রেওয়াজও রয়েছে।

তবে চলমান বাজেট অধিবেশনের শুরুতে এমপি আজীমের জন্য সংসদে কোনো শোক প্রস্তাব আনা হয়নি।

অধিবেশন শুরুর আগে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, মৃত্যু সনদ না পাওয়া পর্যন্ত আনোয়ারুল আজীমের আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে না।

চিফ হুইপ বলেন, মৃত্যু সনদ না পেলে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার আসনটি শূন্য ঘোষণা করবে না সংসদ। সরকারী মৃত্যুর ঘোষণা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে আসা উচিত।

শেয়ারনিউজ, ১০ জুন ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে