ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগে ব্যাংক এশিয়ার বাজিমাত

২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ২২:১০:০৩
ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগে ব্যাংক এশিয়ার বাজিমাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম থাকায় ব্যাংক এশিয়া তাদের তহবিলের একটি বড় অংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৭ শতাংশ বেড়ে ১৯৩০কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ব্যাংকটির বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা ২০২৩ অর্থবছর-এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংক এশিয়ার নিট মুনাফা ৭০.৯ শতাংশ বেড়ে ৩৫১ কোটি ২০ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। মূলত শক্তিশালী ট্রেজারি অপারেশন, পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল প্রভিশনিং ও কম কর ব্যয়ের কারণে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটির কস্ট-টু-ইনকাম রেশিও ২০২৩ সালের ৪৫.৪ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ৩৭.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ কর্মদক্ষতারই বহিঃপ্রকাশ।

আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ব্যাংকটি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমানতের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৪ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক দেশের বৃহত্তম, যেখানে আমানতের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এই আমানত ২০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্যাংকটি। তবে কাসা (CASA) রেশিও কমে ৩৮.২ শতাংশ হওয়ায় মেয়াদি আমানতের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে, যা তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচ কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ঋণ ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক এশিয়া আগামী তিন বছরে বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে তাদের ঋণ ও আমানত অনুপাত (LDR) ৬৪.৮ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা ৮৭ শতাংশের চেয়ে অনেক নিচে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে এবং বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়লে ব্যাংকটি ট্রেজারি বন্ড থেকে তহবিল সরিয়ে উচ্চ মুনাফাসম্পন্ন ঋণে বিনিয়োগ করতে পারবে। এছাড়া করপোরেট ঋণের নির্ভরতা কমিয়ে রিটেইল ও এসএমই ঋণকে মোট ঋণের অন্তত ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর হলো, ব্যাংক এশিয়ার মূলধন ভিত্তি বর্তমানে বেশ শক্তিশালী। বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততার হার প্রায় ১৫ শতাংশ। এই শক্তিশালী অবস্থান বজায় থাকায় ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংক আলফালাহ-এর বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটিও ব্যাংকটির শাখা নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক ভিত্তি আরও বাড়াতে সহায়ক হবে।

তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার বেড়ে ১১.৪ শতাংশ হওয়ায় প্রভিশন সংরক্ষণের চাপ বেড়েছে। এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ২.৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন বর্তমানে ঋণাত্মক (-১.০%) পর্যায়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন ঋণ অবলোপন নীতি ব্যবহার করে ব্যাংকটি তাদের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে, যা ভবিষ্যতে ডিভিডেন্ড দেওয়ার পথ সুগম করবে। সূত্র: ইবিএল সিকিউরিটিজের পর্যালোচনা।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে