ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

১৬ মাস আইপিও শুন্য: নজিরবিহীন স্থবিরতায় দেশের শেয়ারবাজার

২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ২১:৪০:২৬
১৬ মাস আইপিও শুন্য: নজিরবিহীন স্থবিরতায় দেশের শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে গত ১৬ মাস ধরে কোনো নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ার এক নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনকি এই দীর্ঘ সময়ে নতুন করে কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদনও জমা পড়েনি। করোনা মহামারির সময়কাল বাদ দিলে গত দেড় দশকে এমন স্থবিরতা আর দেখা যায়নি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার দ্রুত বাজারে ছাড়ার নির্দেশনার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও তার কোনো বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি, যা বাজার সংশ্লিষ্টদের হতাশ করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সর্বশেষ কোম্পানি হিসেবে ‘টেকনো ড্রাগস’ বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর থেকে আইপিও অনুমোদন বা তালিকাভুক্তি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ২০২৪ সালে টেকনো ড্রাগস ছাড়াও এনআরবি ব্যাংক, শিকদার ইনস্যুরেন্স ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজসহ মোট পাঁচটি কোম্পানি বাজারে এসেছিল। দীর্ঘ সময় নতুন কোনো বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি না আসায় দেশের শেয়ারবাজার অন্তত দুই বছর পিছিয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয় এবং খন্দকার রাশেদ মাকসুদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাজার সংস্কারের লক্ষ্যে গত ৭ অক্টোবর একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়, যারা ‘পাবলিক অফার অব ইক্যুয়িটি সিকিউরিটিজ বিধিমালা, ২০২৫’ নামে নতুন আইপিও আইন প্রণয়নের কাজ করছে। এই নতুন বিধিমালার জনমত যাচাই শেষ হয়েছে এবং শিগগির এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে পারে। মূলত এই আইনি পরিবর্তনের কারণেই অনেক কোম্পানি আবেদন করতে দ্বিধায় রয়েছে।

বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালামের মতে, নতুন বিধিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পুরোনো বিধিমালা অনুযায়ী আবেদন করতে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু কোম্পানিগুলোর সুশাসনের অভাব এবং বর্তমান ‘রেস্ট্রিকটেড প্রাইস মডেল’-এর কারণে তারা বাজারে আসতে আগ্রহী হয়নি। এছাড়া আগের কমিশনের আমলে অনুমোদিত কিছু আবেদনে অসংগতি পাওয়ায় বর্তমান কমিশন সেগুলো বাতিল করে দিয়েছে। সরকারি নির্দেশের পরও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্ত না হওয়া বাজারের গতি ফেরানোর পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইর প্রধান নির্বাহী মাজেদা খাতুন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারি লাভজনক কোম্পানির সংখ্যা কম হওয়া এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে নীতিগত জটিলতা থাকায় তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত হচ্ছে না। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বোর্ড অনুমোদন এবং বড় ধরনের কর সুবিধা না থাকাও একটি বড় কারণ।

অন্যদিকে ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম মনে করেন, একটি অরাজনৈতিক সরকারের আমলে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়া দুঃখজনক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বর্তমানে বাজারে তালিকাভুক্ত ৩৮৪টি কোম্পানির মধ্যে ১০২টিই দুর্বল বা ‘জেড’ ক্যাটাগরির, যা মোট কোম্পানির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। উদ্বেগের বিষয় হলো, সাবেক দুই চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মেয়াদে অনুমোদিত কোম্পানিগুলোর ৩৫ শতাংশই এখন এই দুর্বল তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বাজারে ভালো মানের কোম্পানির তীব্র সংকট থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব ও বাজারের মন্দা ভাব আরও প্রকট হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে