ঢাকা, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

১৭ বছরের গু'ম-খু'ন, একে একে বেরিয়ে আসছে লোমহর্ষক বর্ণনা

২০২৫ ডিসেম্বর ২২ ১৮:৪০:১৮
১৭ বছরের গু'ম-খু'ন, একে একে বেরিয়ে আসছে লোমহর্ষক বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৯০-এর পর থেকে ক্ষমতার পালাবদলে চলা গুম-খুনের ধারায় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ শিকার হয়েছেন। প্রথমে বালিশ দিয়ে মাথায় বা বুকে গুলি চালানো হতো। তারপর ছুরি দিয়ে পেট কেটে হত্যা করা হতো। কিছু লাশ মাথা ও পায়ে সিমেন্টের ব্লক বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা নিরপরাধ সাধারণ মানুষও ঘটনার শিকার হয়েছিলেন।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে অভিযোগ, তিনি টানা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অন্তত তিনটি বড় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল অভিযোগ গ্রহণ করেন। অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য প্রথম দিন ধার্য করা হয় ২১ ডিসেম্বর। তবে কারাগারে আদেশ পৌঁছানো না হওয়ায় জিয়াউল হাজির হননি। পরে আদালত তাকে ২৩ ডিসেম্বর হাজির করার নির্দেশ দেন।

তথ্য অনুযায়ী, মেজর পদে থাকাকালীন ২০০৯ সালে তিনি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব) পোস্টিং পান। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগত হিসেবে আবির্ভূত হন। মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার সময় কোনো ব্যাটালিয়ন বা ফরমেশন কমান্ডের অভিজ্ঞতা তার কাছে ছিল না।

২০০৯–২০১৬ সালের মধ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক ও এডিজি (অপারেশনস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়কালেই বহু গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার নির্দেশে র‌্যাবের অনুগত সদস্যরা অমানবিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন।

একটি উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা অনুযায়ী, ২০১১ সালের ১১ জুলাই গাজীপুরের পুবাইলে তিন বন্দিকে র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে বের করে হত্যা করা হয়। কিছু লাশ সড়কের পাশে খালের মতো গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে একজন সজল নামে শনাক্ত হয়, অপর দু’জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে ধরা পড়ে।

বরগুনার বলেশ্বর নদীতে ৫০ জনকে হত্যা করা হয়। নদী ও আশেপাশের খাল ও উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় একই পদ্ধতিতে অপারেশন চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গভীর রাতে স্থানীয়ভাবে দোকানপাট বন্ধ করা, বাতি নিভানো এবং মানুষকে ঘরে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হতো। র‌্যাব সদস্যরা সাদা পোশাক পরে ট্রলার বা বোটে বন্দিদের নিয়ে নদীতে নিতেন এবং মাথা বা বুকে বালিশ দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করতেন। এরপর ছুরি দিয়ে পেট কেটে লাশ পানিতে ডুবিয়ে দিতেন।

সদরঘাট, বরিশাল, খুলনা ও সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে বনদস্যু দমনের আড়ালে এই নৃশংস অপারেশন চালানো হতো। জিয়াউল নিজেই সরাসরি অভিযানে অংশ নিতেন এবং নির্ধারিত হত্যার স্থানে স্থানীয় ব্যাটালিয়নের নির্বাচিত সদস্যরা উপস্থিত থাকতেন।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তিনটি মূল অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। এতে একশর বেশি মানুষের গুম-খুন প্রমাণিত। পাশাপাশি আরও কয়েকশ মানুষকে হত্যা ও গুমের তদন্ত চলছে। জিয়াউলসহ অপর সহযোগীদের বিরুদ্ধেও আলাদা চার্জ দেওয়া হবে।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি সাধারণত ফরমেশন কমান্ড, ইউনিট অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। তবে জিয়াউলকে গুম-খুনে দক্ষতার কারণে অবসরপ্রাপ্ত অবস্থায়ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে