ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

অবশেষে আমেরিকাতেও রক্ষা হচ্ছে না নেতানিয়াহুর

২০২৫ নভেম্বর ২০ ০৮:৫০:৫৪
অবশেষে আমেরিকাতেও রক্ষা হচ্ছে না নেতানিয়াহুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিউ ইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর। একটি জনসভা ও পরবর্তীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মামদানি ঘোষণা করেন, যদি নেতানিয়াহু নিউ ইয়র্ক সফর করেন, তাহলে শহর প্রশাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুসরণ করে তাকে আটক করার উদ্যোগ নেবে। তিনি দাবি করেন, এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়; বরং নিউ ইয়র্ক সিটি আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি যে অঙ্গীকারবদ্ধ—তারই প্রতিফলন। এই অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আইন যেমন আছে, সেটির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে। নতুন আইন তৈরির কোনো ইচ্ছা আমার নেই।”

মামদানি তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন যে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ICC-এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় নিউ ইয়র্ক সিটি নীতি অনুযায়ী সেটিকে সম্মান করতে বাধ্য। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ICC-এর সদস্য নয় এবং ফেডারেল আইন, আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ও কূটনৈতিক ইমিউনিটি—এ সব মিলিয়ে বাস্তবে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা অত্যন্ত সীমিত, তবুও মামদানি এই দাবিকে নৈতিক অবস্থান হিসেবে তুলে ধরেন। তার ভাষায়, একটি শহর যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়, তবে ন্যায়বিচারের প্রতি তার অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তিনি জানান, “যা সম্ভব, তার সবকিছুই আমরা করব। আইনের সীমানা ছাড়িয়ে যাব না, কিন্তু সীমানার ভেতরে থাকা প্রতিটি পথই আমরা যাচাই করব।”

নেতানিয়াহুর নাম উচ্চারণের মধ্যেই মামদানি নিউ ইয়র্কের ইহুদি সম্প্রদায়কে সরাসরি সম্বোধন করেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি না রাখার অনুরোধ জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার বক্তব্য কোনোভাবেই নিউ ইয়র্কের ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয়, বরং একজন রাজনৈতিক নেতার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “এই শহরের প্রতিটি ইহুদি নাগরিক নিরাপদ। তাদের মর্যাদা, পরিচয় ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখা আমাদের প্রশাসনের প্রথম অগ্রাধিকার।” তার মতে, রাজনৈতিক সমালোচনা কখনো ধর্মীয় পরিচয়ের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত নয়, আর নিউ ইয়র্ক এই নীতির প্রতি অটল থাকবে।

ঘটনা সম্পর্কিত ভিডিওতে বিভিন্ন দৃশ্য প্রদর্শিত হয়, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। একদিকে দেখা যায় নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নেতানিয়াহুর বক্তব্য, অন্যদিকে নিউ ইয়র্ক শহরের কিছু ধ্বংসস্তূপ ও বিশৃঙ্খল চিত্র—যা যুদ্ধ ও সংঘাতের প্রতীকী উপস্থাপনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। একই সঙ্গে দেখা যায় মামদানির জনসভা, যেখানে “CWA STRONG” এবং “OUR TIME IS NOW” লেখা ব্যানার হাতে সমর্থকদের ভিড়। ভিডিওর আরেক অংশে তাকে ABC7-কে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়, যেখানে তিনি তার অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেন। এর বিপরীতে, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের ইসরায়েল সফর ও নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের দৃশ্য রাজনৈতিক মতবিরোধের আরেকটি মাত্রা যোগ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামদানির বক্তব্য একটি শক্তিশালী প্রতীকী অবস্থান হলেও তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র ICC-এর সদস্য নয়, ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নেতানিয়াহুর কূটনৈতিক ইমিউনিটি তাকে স্থানীয় প্রশাসন দ্বারা গ্রেপ্তার হওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারের মতো বিষয় সাধারণত ফেডারেল সরকারের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় স্থানীয় সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তবুও মামদানি তার অবস্থানকে "নৈতিক দায়িত্ব" হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যা মানবাধিকার ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

মামদানির এই অবস্থান শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। মানবাধিকারকেন্দ্রিক প্রগতিশীল গোষ্ঠীগুলো তার বক্তব্যকে সাহসী, ন্যায়বিচারসম্মত এবং আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান হিসেবে দেখছে। বিপরীতমুখী গোষ্ঠী এটিকে এক ধরনের রাজনৈতিক স্টান্ট বলে উল্লেখ করেছে—যা বাস্তবে কার্যকর হবে না কিন্তু নির্বাচনী সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় বার্তা হিসেবে কাজ করবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—মামদানির মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতি, মানবাধিকার, কূটনীতি এবং স্থানীয় প্রশাসনিক ক্ষমতার সীমা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু করেছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে