ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আইএমএফের চোখে ঝুঁকিতে দেশের ১৬ ব্যাংক

২০২৫ নভেম্বর ১৪ ১০:৪৯:৫২
আইএমএফের চোখে ঝুঁকিতে দেশের ১৬ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাত ভয়াবহ খেলাপি ঋণের চাপে নাজুক অবস্থায় পড়েছে। লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা ঋণ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়—যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশের বেশি, সেগুলোকে একীভূত (মার্জার) করা বা অবসায়নের আওতায় আনা প্রয়োজন। সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের আলোচনায় এমন পরামর্শ উঠে আসে।

আইএমএফের এ পরামর্শের পরপরই গত বুধবার ব্যাংক খাতের সংকট নিরসনে দেশের ৪৭টি ব্যাংকের এমডি ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডেপুটি গভর্নর কবির আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত, বিশেষায়িত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো অংশ নিলেও একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি ব্যাংক এবং খেলাপি ঋণের হার কম থাকা বিদেশি ব্যাংকগুলোকে রাখা হয়নি।

সূত্র জানায়, আইএমএফ জানতে চায়—খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশে বিলম্বের কারণ, ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ এবং তা কমাতে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু উদ্যোগের ব্যাখ্যা দিলেও অবসায়ন পরামর্শ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে যেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশের বেশি, এমন ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক ইতোমধ্যেই একীভূতকরণের আওতায় আছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের এমডির দাবি, সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩১ শতাংশে পৌঁছেছে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানতে চায়—ব্যাংকগুলো কীভাবে খেলাপি ঋণ কমাতে চায় এবং তাদের জন্য কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। নির্দেশনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যেই পুনঃতফসিল, আইনগত ব্যবস্থা বা অন্যান্য উপায়ে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা দেবে বলেও জানানো হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতির কারণে ব্যাংক খাত অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। নিরীক্ষা ও তদন্ত কার্যক্রম জোরদার হওয়ার পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আরও স্পষ্ট হয়।

সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ বছর ১৬ সেপ্টেম্বর জারি করা সার্কুলারে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। এই সুবিধা পেতে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এর আগে নীতিসহায়তা কমিটির মাধ্যমে ৪০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান পুনঃতফসিল সুবিধা পেয়েছে।

এছাড়া গত মাসে খেলাপি ঋণ অবলোপন নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। নতুন নিয়মে মাত্র ৩০ দিন আগে নোটিশ দিলেই ‘মন্দ’ মানের খেলাপি ঋণ অবলোপন করা যাবে—যেখানে আগে দুই বছর পুরোনো না হলে তা অবলোপন করা সম্ভব ছিল না।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে