ঢাকা, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

নতুন মার্জন বিধিমালা: শেয়ারবাজার বদলের ইঙ্গিত, নাকি উদ্বেগের সংকেত?

২০২৫ নভেম্বর ১৯ ০৮:৪০:০১
নতুন মার্জন বিধিমালা: শেয়ারবাজার বদলের ইঙ্গিত, নাকি উদ্বেগের সংকেত?

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক জারি করা কঠোর 'বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্জিন) বিধিমালা, ২০২৫' কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

গত ৬ নভেম্বর তারিখে গেজেট আকারে প্রকাশিত এই নতুন বিধিমালায় মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে একাধিক কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে মূলত ছোট বিনিয়োগকারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

নতুন নিয়মে, কোনো বিনিয়োগকারীকে মার্জিন ঋণ পাওয়ার যোগ্য হতে হলে পূর্ববর্তী এক বছরে তার গড় বিনিয়োগের পরিমাণ ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা থাকতে হবে। এর ফলে ৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ থাকা ব্যক্তিরা নতুন করে মার্জিন ঋণ নেওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হবেন।

এমনকি, বিদ্যমান ঋণ গ্রহীতাদেরও এক বছরের মধ্যে পোর্টফোলিওর মূল্য ওই সীমায় উন্নীত করতে হবে, অন্যথায় তাদের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি (ফোর্স সেল) হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে হবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, ছাত্র, গৃহিণী বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা—যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস নেই—তাদের আর্থিক ঝুঁকি বিবেচনা করে মার্জিন অর্থায়নের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। মার্জিন ঋণ শুধুমাত্র শেয়ার কেনার জন্যই ব্যবহার করা যাবে; ক্যাশ উত্তোলন বা অন্য খাতে অর্থ স্থানান্তর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পোর্টফোলিওর মূল্য ৫ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা এর মধ্যে থাকলে, বিনিয়োগকারীরা তাদের ইকুইটির ৫০ শতাংশ (১:০.৫ অনুপাতে) মার্জিন সুবিধা পাবেন। ১০ লাখ টাকার বেশি পোর্টফোলিও মূল্যের জন্য এই অনুপাত ১:১ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, বীমা কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমাও ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন নিয়মে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, গ্রাহকের ইকুইটি যদি প্রয়োজনীয় স্তরের ৭৫ শতাংশের নিচে নেমে যায় তবে বাধ্যতামূলকভাবে মার্জিন কল জারি করতে হবে। আর পোর্টফোলিওর মূল্য ৫০ শতাংশ হ্রাস পেলে শেয়ার বিক্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এছাড়াও, মার্জিন ঋণের সুদ প্রতি ত্রৈমাসিকে ক্যাশ অথবা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। শেয়ারের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রেও কঠোরতা আনা হয়েছে; ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা ফ্রি-ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন আছে এমন কোম্পানির শেয়ার এবং আর্থিক দুর্দশা, পরিচালন স্থগিতাদেশ বা যোগ্য নিরীক্ষা মতামত আছে এমন কোম্পানির শেয়ার মার্জিনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে।

গত ৬ নভেম্বর তারিখে এই নিয়ম গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর বাজারে ব্যাপক দরপতন ও অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় ১২ নভেম্বর তারিখে হাইকোর্ট নতুন বিধিমালা ২০২৫ এর বৈধতা নিয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে।

তবে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক ও শেয়ারবাজারের দুর্বলতার কারণে এই নতুন নিয়মগুলো ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে