ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ক্লিনার থেকে যেভাবে হয়েছেন ভারতের শীর্ষ নায়িকা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৫ ১০:০৬:২৬
ক্লিনার থেকে যেভাবে হয়েছেন ভারতের শীর্ষ নায়িকা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন শক্তিশালী নারী নেত্রী হিসেবে পরিচিত স্মৃতি ইরানি—যিনি শুধু একজন মন্ত্রীই নন, বরং একজন সংগ্রামী নারীর প্রতিচ্ছবি। দিল্লির এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে বলিউড ও ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তার জীবন কাহিনী যেন সিনেমাকেও হার মানায়—একজন সাধারণ মেয়ের অতিমানবীয় অধ্যবসায়ের বাস্তব উদাহরণ।

১৯৭৬ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন স্মৃতি ইরানি। তার পরিবার ছিল মধ্যবিত্তের নিচের সারিতে। বাবা ছিলেন একজন সাধারণ বই বিক্রেতা, যিনি দিল্লির আর্মি ক্লাবের বাইরে বসতেন। মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশলা বিক্রি করতেন—এমনকি ফুড ডেলিভারি করার মতো কাজও করতেন সংসার টানার জন্য।

অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে স্মৃতি ইরানিকে কলেজের পড়া মাঝপথেই ছেড়ে দিতে হয়। জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করতে তিনি দিল্লির এক রেস্তোরাঁয় বাসন মাজার কাজ শুরু করেন। তখন হয়তো কেউ ভাবতেও পারেনি, এই তরুণী একদিন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হবেন।

স্মৃতির জীবনে ব্যর্থতার তালিকা দীর্ঘ। একসময় তিনি মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং টপ টেন-এ জায়গা করে নেন। তবে সে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার খরচ জোগাড় করতে তাকে ধার করতে হয়েছিল টাকা। তবুও এটি ছিল তার আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার এক বড় দৃষ্টান্ত।

এরপর তিনি এয়ার হোস্টেস হওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হন। কারণ—তাকে বলা হয়েছিল, তার মধ্যে "ব্যক্তিত্বের অভাব" রয়েছে। এই কথা আজ শত কোটি মানুষের চোখে বেমানান, কারণ তার ব্যক্তিত্ব এখন বহু নারীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

২০০০ সালে তার ভাগ্য বদলে যায়। টেলিভিশন নির্মাতা একতা কাপুর তাকে "কিউঙ্কি সাস ভি কভি বহু থি" নামক মেগা ধারাবাহিকে ‘তুলসী বিরানি’ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এই চরিত্রের মাধ্যমে স্মৃতি ইরানি রাতারাতি পরিচিতি লাভ করেন এবং ভারতের ঘরে ঘরে ‘তুলসী’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।

এই সিরিয়াল তাকে শুধু জনপ্রিয়তাই দেয়নি, বরং তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের টেলিভিশনের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীদের একজন।

তারকা খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছানোর পর স্মৃতি ইরানি রাজনীতির ময়দানে নাম লেখান। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-তে যোগ দেন এবং কয়েকটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার পর তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি মানবসম্পদ উন্নয়ন, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্মৃতি ইরানির রাজনৈতিক সফর বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও, তিনি তার সাবলীল বক্তৃতা, তীক্ষ্ণ উপস্থিত বুদ্ধি এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে।

আজ স্মৃতি ইরানি শুধুই একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং ভারতীয় সমাজে নারীর সম্ভাবনার প্রতীক। একসময় যাকে বলা হয়েছিল “ব্যক্তিত্ব নেই”, সেই মানুষটিই আজ লাখো নারীর আদর্শ, যিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন—জন্ম নয়, নিজেকে গড়ে তোলাই সবচেয়ে বড় পরিচয়।

তার জীবন আমাদের শেখায়, সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না—যদি থাকে আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রম।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিনোদন এর সর্বশেষ খবর

বিনোদন - এর সব খবর



রে