ঢাকা, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

খেলাপি থেকে রেহাই পাচ্ছেন এক হাজারের বেশি ঋণগ্রহীতা

২০২৫ আগস্ট ১৭ ১৪:৩৩:৫৩
খেলাপি থেকে রেহাই পাচ্ছেন এক হাজারের বেশি ঋণগ্রহীতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সংকট দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। এক হাজারের বেশি ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হলেও আদালতের রিটকে ঢাল বানিয়ে তারা নিয়মিত ঋণগ্রহীতার তালিকায় অবস্থান করছেন। ফলে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে তারা ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকা এড়িয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে এক হাজার ৮৬ জন ঋণগ্রহীতা ২৭ হাজার ৩০২টি ঋণের বিপরীতে আদালতে রিট করেছেন। এসব রিট মামলার কারণে এক লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আটকে আছে। বছরের পর বছর ধরে এই ঋণগুলো মামলায় ঝুলে থাকায় ব্যাংক খাত চাপে পড়ছে।

আগে ঋণখেলাপিরা সরাসরি হাইকোর্টে রিট করে নাম সিআইবিতে না ওঠার সুযোগ নিতেন। তবে ২০১৮ সালের শেষ দিকে আপিল বিভাগের আদেশে এ পথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন—প্রথমে নিম্ন আদালতে ঘোষণামূলক মামলা, তা খারিজ হলে হাইকোর্টে আপিল। হাইকোর্ট অনেক ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয় এবং পরে সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়তে থাকে। ফলে বছরের পর বছর তারা নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে টিকে যান।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি নির্ধারণের কোনো সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা নেই। এ সুযোগে অনেক ঋণগ্রহীতা সময়মতো টাকা ফেরত না দিয়ে আদালতের আদেশে নিজেদের নিয়মিত দেখাতে সক্ষম হন। এতে তারা শুধু খেলাপির তকমা থেকে রেহাই পান না, বরং নতুন করে অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নেন। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো অর্থঋণ আদালতে মামলা করেও কার্যকর প্রতিকার পাচ্ছে না।

খেলাপি ঋণ আদায়ে দীর্ঘসূত্রতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে—অপর্যাপ্ত অর্থঋণ আদালত, বিচারকের সংকট, ত্রুটিপূর্ণ জামানত নথি, আইনজীবীদের যথাযথ সহায়তা না পাওয়া এবং ব্যাংকের আইনি দলের দুর্বলতাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আদালতের স্থগিতাদেশ ব্যাংক খাতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে অগণিত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় না। বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া আর্থিক খাত টিকবে না।

তিনি মনে করেন, আধুনিক অর্থনীতির জন্য আধুনিক আদালত অপরিহার্য। লাখ লাখ মামলা ঝুলে থাকা নিজেই প্রমাণ করে কোর্ট সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ। তাই ব্যাংকের আইনি বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর লিগ্যাল টিমকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দেয়। এ জন্য প্রতিটি ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে একজন চিফ লিগ্যাল অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। তার থাকতে হবে অন্তত ১০ বছরের মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং ৫ বছরের ব্যাংকিং খাতে কাজের অভিজ্ঞতা।

এ ছাড়া লিগ্যাল টিমে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সেখানে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কর্মকর্তার আইন বিষয়ে ডিগ্রি ও ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ শতাংশ। এর বাইরে আদালতের মামলায় আটকে আছে আরও এক লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মামলা-আটকানো অর্থসহ মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে