ঢাকা, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতপশিলের ক্ষমতা ব্যাংকের হাতে ছাড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২০২৫ জুলাই ২১ ০৭:৪৩:১৯
ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতপশিলের ক্ষমতা ব্যাংকের হাতে ছাড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনর্গঠন বা পুনঃতপশিলের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য ব্যাংকগুলো এখন ডাউনপেমেন্ট, ঋণের মেয়াদসহ বিভিন্ন শর্ত শিথিল করতে পারবে। এই বিশেষ সুবিধা ৫০ কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক খুব শীঘ্রই এ-সংক্রান্ত একটি সমন্বিত সার্কুলার জারি করবে।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতপশিল বা পুনর্গঠনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। তবে, সে সময় কোনো নির্দিষ্ট নীতিগত কাঠামো তৈরি করা হয়নি। এর মধ্যে কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১২০০-এর বেশি আবেদন জমা পড়েছে। পুনর্গঠিত কমিটি দেখতে পেয়েছে, কিছু আবেদনের সঙ্গে ২৮টি পর্যন্ত ব্যাংকের সম্পৃক্ততা রয়েছে, যা নিষ্পত্তি করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। এ কারণেই নতুন কমিটি নীতি-সহায়তার বিষয়টি ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। এখন থেকে কেবল যে সকল কেস নিষ্পত্তির সক্ষমতা ব্যাংকের নেই, সেগুলোই বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো যাবে। সব কিছুই নির্ধারিত সার্কুলারে উল্লিখিত নীতিমালা মেনেই করা হবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ব্যাংকগুলো আগের মতো আর খেলাপি ঋণ লুকানোর সুযোগ পাচ্ছে না। এরফলে গত এক বছরে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ।

খেলাপি ঋণের এই আকস্মিক বৃদ্ধি অনেক ব্যাংককে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতিতে ফেলেছে, যার কারণে এ বছর হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক ডিভিডেন্ড দিতে পেরেছে। আগামী বছর কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি হলে, তারা যত মুনাফাই করুক না কেন, ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। এসব কারণে ব্যাংকগুলো এখন খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাপক তৎপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হঠাৎ কঠোরতার কারণে যাতে কোনো ব্যবসা বন্ধ হয়ে না যায়, সে জন্য ব্যাংকগুলোই নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে সুবিধা দিতে পারবে।

গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোরতা দেখালেও বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে কখনও বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি করোনার অজুহাতে ঋণ পরিশোধ না করেও ঋণ নিয়মিত রাখা হয়েছিল। এই ধরনের শিথিলতার কারণে ঋণ পরিশোধ না করার একটি নতুন গোষ্ঠী তৈরি হয়। গত পাঁচ বছরে মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতপশিল হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ৫৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালে রেকর্ড ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতপশিল হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিম্ন প্রবৃদ্ধি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সৃষ্ট অভিঘাত মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে চলমান রাখা ও ব্যাংক খাতকে সুসংহত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করে, যারা ৫০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব অঙ্কের খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সুপারিশ করবে। তবে নির্দিষ্ট কাঠামো না থাকায় এবং শুধু ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণের কথা বলায় পরবর্তীতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এমন অবস্থায় বিষয়টি একটি কাঠামোর আওতায় আনা হচ্ছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে