ঢাকা, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশেও টলে না বাংলাদেশ ব্যাংক

২০২৫ মে ২৫ ১০:০৪:৪৬
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশেও টলে না বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় এক লাখ কোটি টাকার দেশীয় কাগজশিল্প আজ চরম সংকটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তার অভাব এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় দেশের ১০৬টি কাগজ কারখানার মধ্যে ৭০টি বন্ধ হয়ে গেছে। যে ৩৬টি চালু রয়েছে, সেগুলোও গ্যাস সংকটে উৎপাদন সক্ষমতা হারিয়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

এই সংকটকালীন মুহূর্তে অর্থ মন্ত্রণালয় কাগজশিল্পকে রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানালেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টিকে কার্যত উপেক্ষা করছে। বরং দায়সারা মনোভাব নিয়ে ৫০ কোটি টাকার ঋণ বা তার বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠন করলেও সেই কমিটির কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান নয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং কাগজশিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ২৫ লাখ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এর সঙ্গে রয়েছে আরও অন্তত ৩০০টি লিংকেজ শিল্প। দেশীয় কাগজশিল্প বছরে ১৬ লাখ টন উৎপাদন করতে সক্ষম, যেখানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৯ লাখ টন। উদ্বৃত্ত কাগজ বিশ্বের ৪০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

তবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, কাঁচামাল, ডলার ও ঋণসংকটে পড়ায় এই শিল্প এখন প্রায় বিপর্যস্ত। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা হারিয়ে ফেলছে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো।

২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় কাগজশিল্পের জন্য নীতিগত সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি পাঠায়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়: বকেয়া সুদ ও আসল অর্থ ব্লকড হিসাবে স্থানান্তর করে এক বছরের মরাটোরিয়ামসহ ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগ, ঋণ স্থিতির ২% ডাউনপেমেন্টে ব্লক সুবিধা, কস্ট অব ফান্ড হারে সুদ।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি পদক্ষেপ না নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ৫০ কোটির বেশি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের আবেদন পর্যালোচনার পথে হাঁটছে। এখন পর্যন্ত সেই কমিটির কার্যক্রম সীমিত আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে, বাস্তবায়ন হয়নি কোনো সিদ্ধান্ত।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “নীতিমালার কারণে খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল আমদানি করতে পারে না। এতে তারা আরও অক্ষম হয়ে পড়ে। সব খেলাপিই ইচ্ছাকৃত নয়, বাস্তব সংকটে পড়েই অনেকে খেলাপি হয়েছেন।”

পার্ল পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের পরিচালক রেজাউল ইসলাম জানান, গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ৩০–৫০ শতাংশ কমেছে। ব্যাংক সুদের হার দ্বিগুণ হওয়ায় পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে, যা কারখানা চালু রাখা কঠিন করে তুলেছে।

বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, ১০৬টি কারখানার মধ্যে ৭০টি ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস, এলসি সংকট ও কাঁচামাল আমদানিতে বাধার কারণে বাকি কারখানাগুলোও ধুঁকছে।

বিপিএমএর সচিব নওশেরুল আলম বলেন, “কাঁচামাল আমদানির পথে নীতিগত বাধা ও মূল্যস্ফীতি বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। ঋণের উচ্চ সুদহার এবং খেলাপির নতুন সংজ্ঞা উদ্যোক্তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলছে।”

তিনি আরও জানান, কাগজশিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ৭০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তারল্য সংকটে থাকা মিলগুলো পাল্প আমদানি করতে পারছে না। এতে পাঠ্যপুস্তকের কাগজ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশেষ ব্যাংক সুবিধা বা প্রণোদনা না এলে উদ্যোক্তারা ঋণখেলাপির তালিকায় পড়বে। ফলে একদিকে যেমন শিল্প ধ্বংস হবে, অন্যদিকে ব্যাংক খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এক হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে, যাচাই-বাছাই চলছে। কমিটি এখনো কোনো সুপারিশ চূড়ান্ত করেনি। তবে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসবে।”

মুয়াজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে