ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
Sharenews24

দেশজুড়ে জমির রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে বড় ধাক্কা আসছে

২০২৫ মে ২০ ১৫:১১:০৪
দেশজুড়ে জমির রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে বড় ধাক্কা আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কালোটাকা সৃষ্টির পথ রুদ্ধ করতে এবং কর ফাঁকি ঠেকাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জমির নিবন্ধন ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনছে সরকার। বিদ্যমান মৌজামূল্য নির্ভর দলিল রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি বাতিল করে জমির প্রকৃত বাজারমূল্যে দলিল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে।

এই সংস্কারে বাজারদর নির্ধারণ ও হালনাগাদের দায়িত্ব পাবে গণপূর্ত, আইন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। আর দলিলের ফি, আয়কর, মূসক ও স্থানীয় কর হারাহারি হারে কমিয়ে আনবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আইন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা আজ (মঙ্গলবার) অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এতে অনুমোদন দিতে পারেন।

সূত্র জানায়, নীতিমালা কার্যকর হলে রেজিস্ট্রেশন খরচ কমবে, রেজিস্ট্রেশনের পরিমাণ বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।

২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জমির বাজারমূল্য নির্ধারণের সুপারিশ এলেও বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এমনকি ২০২০ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দিলেও তা উপেক্ষিত হয়।

সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, “বাজারমূল্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জমির দাম আরও বেড়ে গেলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ব্যাংক ঋণের সুদ ও জমির মূল্য ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

অন্যদিকে রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন জানান, “রেজিস্ট্রেশন ফি, গেইন ট্যাক্স, ভ্যাট ও স্থানীয় কর কমানো হলে জমি ও ফ্ল্যাট বেচাকেনা বাড়বে, রাজস্বও কমবে না বরং বাড়বে।”

রাজউক অঞ্চলভিত্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি।

সিডিএ, কেডিএ, আরডিএ, গাজীপুর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এখনও মৌজাভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করছে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সর্বশেষ ২০২১ সালে ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্ধারিত মৌজাদরের ভিত্তিতে মূল্য হালনাগাদ করে।

বর্তমান ব্যবস্থায় দলিল মূলত মৌজাদরে রেজিস্ট্রি হয়। ফলে বাস্তব বাজারমূল্যের তুলনায় সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারায়। সিপিডির গবেষণা অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারায় সরকার।

উদাহরণস্বরূপ: গুলশানে ১ শতাংশ জমির মৌজাদর মাত্র ১ লাখ থেকে ৫৮ লাখ টাকা, অথচ বাস্তবে সেই জমির দাম কোটি টাকার নিচে নেই।

ধানমন্ডির মৌজাদর প্রায় ৪৪ লাখ টাকা, যেখানে বাস্তব দর এর চেয়ে দ্বিগুণ বা তার বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জমি রেজিস্ট্রেশন থেকে রাজস্ব

রেজিস্ট্রেশন ফি: ১,৫৯৮ কোটি টাকা

আয়কর: ৬,৩৯৪ কোটি টাকা

মূসক: ৩৬৮ কোটি টাকা

স্ট্যাম্প ফি: ৭৭ কোটি টাকা

স্থানীয় কর ফি: ৩,৯৪৪ কোটি টাকা

অন্যান্য ফি: ২৬২ কোটি টাকা

অর্থ বিভাগ মনে করছে, জমির প্রকৃত বাজারমূল্য অনুসারে দলিল রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যবাধকতা কালোটাকার প্রবাহ ও কর ফাঁকি কমিয়ে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও ন্যায়সংগত রাজস্ব আহরণে সহায়ক হবে। নতুন ব্যবস্থায় জমির মালিকানা পরিবর্তনে আর গোপন নগদ লেনদেন বা কৃত্রিম দাম দেখিয়ে সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে