ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
Sharenews24

ইসলামি ব্যাংক খাতে বাড়ছে অস্থিরতা, বাড়ছে আমানত উত্তোলনের চাপ

২০২৫ মে ১০ ২১:৫৬:১৫
ইসলামি ব্যাংক খাতে বাড়ছে অস্থিরতা, বাড়ছে আমানত উত্তোলনের চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগস্ট অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসা ইসলামি ব্যাংকগুলোতে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের একটি মন্তব্য ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে, যার ফলে এসব ব্যাংকে আমানত উত্তোলনের চাপ বাড়ছে। একইসঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি হারানোর আশঙ্কাও বেড়েছে।

গভর্নরের বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, “অধিকাংশ ইসলামি ব্যাংক আর্থিক সংকটে রয়েছে। খাতটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর অবসায়ন বা একীভূতকরণ (মার্জার) হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে সব ইসলামি ব্যাংক একীভূত করে দুটি বৃহৎ ইসলামি ব্যাংকে রূপান্তরের বিষয়টি ভাবনায় রয়েছে।”

এই বক্তব্যের পর অনেক গ্রাহক তাদের আমানত তুলে নিতে শুরু করেছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো এমনিতেই চাপের মধ্যে আছে, এর মধ্যে এমন মন্তব্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

বিশ্লেষক ও ব্যাংকারদের মতামত

ড. মুস্তাফা কে মুজেরী, ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক, বলেন, “মূল সমস্যা হলো সুশাসনের অভাব। দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে আরেক দুর্বল ব্যাংক একীভূত করলে সুফল আসবে না। বরং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে আগে।”

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, “মানুষ ভেবে নিয়েছে যে মাত্র দুটি ইসলামি ব্যাংক থাকবে। এর ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই ভুল ব্যাখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করলে আস্থা আরও কমে যাবে।”

তিনি বলেন, “মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে নিরাপদ ভেবে। এ ধরনের মন্তব্য আমানতকারীদের আস্থায় বড় আঘাত করে।”

ইসলামি ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক রয়েছে: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ, সোশ্যাল ইসলামী, স্ট্যান্ডার্ড, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি, শাহ্জালাল, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

২০২৪ সালের শেষে এই ব্যাংকগুলোর মোট আমানত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায় এবং বিনিয়োগ প্রায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটির বেশি। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে একাধিক ইসলামি ব্যাংকে ফরেনসিক অডিট চলছে, ফলে প্রকৃত আর্থিক চিত্র এখনও অস্পষ্ট।

‘ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স’ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

বাংলাদেশ ব্যাংক সদ্য অনুমোদিত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’-এর আওতায় ‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠন ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ পৃথক করার পরিকল্পনা করছে। এই প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে একীভূতকরণের বিকল্প বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, একতরফাভাবে এমন প্রস্তাবনা নয়, বরং স্বচ্ছ ও পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। নতুবা ইসলামি ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকদের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে