ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
Sharenews24

সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

২০২৫ মে ১০ ০৯:৩৭:০৫
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হঠাৎ করে দেশত্যাগের ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে তোলপাড় চলছে। কিভাবে তিনি বিদেশে পাড়ি জমালেন, তা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ। এরইমধ্যে দৈনিক যুগান্তরের হাতে এসেছে চাঞ্চল্যকর একটি গোপন নথি।

সূত্র জানায়, গত ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি) এক গোপন চিঠির মাধ্যমে আবদুল হামিদসহ ৪৫ জনের বিদেশগমন রোধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় পুলিশের সদর দপ্তরে। চিঠিতে ৩৯ নম্বরে ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতির নাম। চিঠির স্মারক নম্বর ছিল ৪৫০ এবং এতে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রুজু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিদের দেশত্যাগ রোধ জরুরি।

১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত মামলায় আবদুল হামিদের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা ইমিগ্রেশন শাখা পর্যন্ত পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্রে জানা যায়, সব পর্যায়ে যোগাযোগ করে ও নির্দেশনা পাওয়ার পর আবদুল হামিদ বিমানবন্দর থেকে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকলেও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কেউ তার বিদেশযাত্রা ঠেকানোর নির্দেশনা পাননি। বরং উল্টো তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তাকে গ্রিন সিগনাল দেন।

ওই সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন ভিভিআইপি টার্মিনালের নিজ গাড়িতে। রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ ফ্লাইটে তিনি ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ড. এএনএম নওশাদ খান।

ঘটনার পরপরই মাঠপর্যায়ে দায়িত্বে থাকা পুলিশের চার কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। অতিরিক্ত আইজিপিকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

এসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসীনা আরিফকে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এসবি, র‍্যাব ও এনএসআই—এই তিন গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যাত্রী তালিকা দেখে আবদুল হামিদের বিষয়ে কোনো আপত্তি তোলেননি। তাদের অনাপত্তির ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয় বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবদুল হামিদ ২০১৩ ও ২০১৮ সালে পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল মো. সাহাবুদ্দিন নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর তিনি রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থান করলেও ৫ আগস্টের পর থেকে তার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।

একই সময়ে কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলায় তাকে সহ ১২৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় অভিযোগ ছিল জুলাই মাসে হামলা ও গুলির পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামও উঠে আসে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, তদন্ত চলছে এবং যার দোষ প্রমাণিত হবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে