ঢাকা, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
Sharenews24

শেষ মুহূর্তে আটকে গেল ২৪ ব্যাংকের হিসাব: শেয়ারবাজারে ধাক্কা

২০২৫ মে ০৪ ১০:৪২:০৯
শেষ মুহূর্তে আটকে গেল ২৪ ব্যাংকের হিসাব: শেয়ারবাজারে ধাক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ২০২৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করতে পারেনি। নির্ধারিত সময় ছিল ৩০ এপ্রিল। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টিরই হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। এমনকি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন ২৫টি ব্যাংকের মধ্যেও বেশির ভাগের একই অবস্থা দেখা গেছে।

মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র উপস্থাপন নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি, প্রভিশন সংরক্ষণে বিলম্বিত ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ না দেওয়ার কঠিন শর্ত আরোপ করেছে। এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি বহু ব্যাংক। তবে সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এবারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো শিথিলতা দেখায়নি। এর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় এবং প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য ডেফারেল সুবিধা দেওয়া হতো। এবার সেই সুযোগ না থাকায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে, ফলে বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

এছাড়া, যেসব খেলাপি ঋণ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের আওতায় ছিল, সেগুলোর বিপরীতেও এবার প্রভিশন রাখতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বা অন্য ব্যাংকে আটকে থাকা আমানতের বিপরীতেও প্রভিশন গঠন করতে হচ্ছে। এসব কারণে অধিকাংশ ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ মার্চ একটি নীতিমালায় জানায়, যারা ডেফারেল সুবিধা নিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের জন্য কোনোডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। অনেক ব্যাংক এখন এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করছে।

কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে যেন এত কঠোরতা না দেখানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো লিখিত সিদ্ধান্ত জানায়নি। কেবল মৌখিকভাবে বলা হয়েছে যে সময়মতো জমা দেওয়া হয়েছে ধরে নেওয়া হবে, এবং কোনো জরিমানা হবে না।

বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংক রয়েছে, এর মধ্যে ৯টি বিদেশি ও ৯টি সরকারি। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কেবল রূপালী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ৪৩টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৬টি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, যার মধ্যে ২৪টি ব্যাংক এখনো প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের বাইরে যেসব বেসরকারি ব্যাংক এখনো প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেনি, সেগুলো হলো: ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, ওয়ান ব্যাংক, শাহ্‌জালাল ইসলামী, সাউথইস্ট, ইউসিবি, আল-আরাফাহ ইসলামী, স্ট্যান্ডার্ড, প্রিমিয়ার, এক্সিম, আইএফআইসি, এবি, ন্যাশনাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি ব্যাংক।

অন্যদিকে, যেসব ১২টি ব্যাংক বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে, সেগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবারও লোকসানে থাকায় কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। লভ্যাংশ দিয়েছে: ব্র্যাক, সিটি, ইস্টার্ন, পূবালী, ডাচ্‌-বাংলা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ট্রাস্ট, যমুনা, প্রাইম, উত্তরা ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০.২০ শতাংশ। ২০২৩ সালের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এখন প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার সময় এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক আগামীতেডিভিডেন্ড দিতে পারবে না।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে