ঢাকা, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

বাংলাদেশে এত বজ্রপাতের কারণ

২০২৫ এপ্রিল ২৮ ১৯:২১:৪৭
বাংলাদেশে এত বজ্রপাতের কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : গেল কয়েক বছরে দেশে বজ্রাঘাতে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে, গ্রীষ্মের শুরুতে এবারও বজ্রাঘাতে মৃত্যুর খবর আসছে। সেই সঙ্গে ঘটছে নানা ক্ষয়ক্ষতি।

বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোতে বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও।

বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ ফারুখ। তার মতে, “বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে।

আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটি বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।”

তিনি বলেন, “শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয় আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্র মেঘ। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্র তৈরি হয়। এ রকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।”

বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় ২০১৬ সালের ১৭ মে বজ্রপাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এম এ ফারুখ জানান, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ভারতের কিছু অংশে এবং নেপালেও বজ্রপাত হয়। তবে এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি।

দেশের আয়তনের তুলনায় হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। এর কারণ হিসেবে তিনি সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা বা নেপালে বজ্রপাত হলেও সেখানে মৃত্যুর হার এত বেশি নয়।

আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে তারা বলছেন।

তাদের মতে, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, সেসব এলাকায় যে মেঘের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে।

কিছু গবেষক বলেন, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। পৃথিবীর যে কয়েকটি অঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ, তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম।

উন্নত দেশগুলোতে বজ্রাঘাতে মানুষের মৃত্যু কমলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ছে।

বন্যা এবং সাইক্লোনের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও বজ্রপাতের বিষয়টি অনেকটা ভূমিকম্পের মতোই আকস্মিক।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিলে। কিন্তু সেখানকার তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেশি। খোলা স্থানে মানুষের কাজ করা এবং বজ্রপাতের বিষয়ে তাদের অচেতনতা এর কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এর বেশি শিকার হন খোলা মাঠে কাজ করা কৃষক বা জেলেরা। বিশেষ করে হাওড়াঞ্চলে খোলা জায়গায় মানুষজন কাজ করার কারণে সেখানে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে।

গত কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলার কারণেও হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে