ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

‘নতুন সংবিধান, নতুন রাষ্ট্র নাম নয়’: এনসিপি

২০২৫ মার্চ ২৮ ১০:৪২:৪৪
‘নতুন সংবিধান, নতুন রাষ্ট্র নাম নয়’: এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে আপত্তি জানিয়েছে, তবে সংবিধান সংস্কারের মূলনীতি পরিবর্তনে একমত পোষণ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের মতামত জানায়, যে সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছে, তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও এনসিপি সংবিধানের মূলনীতির ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়, এবং তাদের দাবি, সেগুলোর মধ্যে সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এনসিপি তাদের দলীয় মতামত গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেয়। এতে তারা সংস্কার কমিশনের মোট ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টি বিষয়ে একমত এবং ২৯টি বিষয়ে আংশিক একমত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, বিএনপি এবং এনসিপির মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যেমন সাংসদের মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রীর পদ এবং সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা। বিএনপি সাংসদের মেয়াদ ৫ বছর রাখার পক্ষে থাকলেও, এনসিপি চার বছর করার পক্ষে। এছাড়া, এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মিশ্র নির্বাচন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে, যেখানে নিম্নকক্ষে আসনভিত্তিক পদ্ধতি এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ থাকবে।

এনসিপি আরও প্রস্তাব করেছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে, একে নতুনভাবে 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র' রূপে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

এছাড়া, তারা প্রস্তাব করেছে যে, সংসদের নিম্নকক্ষে একজন সংসদ সদস্য একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে একাধিক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। এনসিপি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এক ব্যক্তির দায়িত্বে থাকা সাপেক্ষে, প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিপরিষদের 'ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস' হিসেবে বিবেচনা করার পক্ষেও রয়েছে।

এনসিপি তাদের মতামতে জানিয়েছে, ‘বহুত্ববাদ’ শব্দের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার উপরও গুরুত্ব দিয়েছে, যেখানে তারা বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী এবং বহুসংস্কৃতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি চায়।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নামক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। এনসিপি এই সুপারিশের সাথে একমত হলেও, তারা এনসিসি থেকে নিয়োগের জন্য দুটি-তৃতীয়াংশ ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।

এনসিপি তরুণদের জন্য নির্বাচনী অধিকার এবং প্রার্থী হওয়ার বয়স সীমা নিয়ে নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছে, যেখানে ভোটার হওয়ার বয়স ১৬ বছর এবং প্রার্থিতার বয়স ২৩ বছর করা হয়েছে।

এছাড়া, এনসিপি সংবিধানে ‘প্রজাতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ব্যবহার করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে, এবং এই শব্দগুলো আগের মতোই বহাল রাখার পক্ষেও মত দিয়েছে।

এনসিপি তাদের মতামত দিয়েছে, সংবিধানে জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে সংসদের সম্মতি ছাড়া এটি করা উচিত নয়। তারা আরও বলেছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এক ব্যক্তির দায়িত্ব থাকা উচিত নয়, তবে প্রধানমন্ত্রীকে 'ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস' হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এই সব প্রস্তাব এবং মতামতগুলি পরবর্তী সময়ে যদি কার্যকর হয়, তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে যা দেশটির রাজনীতি এবং প্রশাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে