ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

সাবেক এমপি আবু জাহির ও তাঁর পরিবারের সম্পদ জব্দের আদেশ

২০২৫ জানুয়ারি ২৩ ১২:১২:২৭
সাবেক এমপি আবু জাহির ও তাঁর পরিবারের সম্পদ জব্দের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: হবিগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আবু জাহিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সোয়া ১০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে, যা তার নির্বাচনি হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। গত ৫ আগস্ট থেকে তিনি পালিয়ে রয়েছেন, কিন্তু তার অবৈধ সম্পদের নানা তথ্য এখন সামনে আসতে শুরু করেছে।

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, আবু জাহিরের নামে ঢাকার গুলশানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট, হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে অনেক জমি এবং বিলাসবহুল গাড়ির মালিকানা রয়েছে। এসব সম্পদের প্রকৃত বাজার মূল্য আরও বেশি হতে পারে। আবু জাহিরের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে এবং ভাইদেরও তার নামে একাধিক সম্পদ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে জমি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিমা পলিসি ইত্যাদি রয়েছে।

দুদকের দেওয়া আবেদনে জানা যায়, আবু জাহিরের নামে ঢাকার গুলশানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট, যার মূল্য ১ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, হবিগঞ্জ টাউন হল রোডে একটি ৫ তলা বাড়ি, যার মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৭১ শতাংশ জমি, একই মৌজায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৮৯ শতাংশ জমি, ৮৮ হাজার টাকা মূল্যের ৩১ শতাংশ জমি, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের ৩২ শতাংশ জমি, ৫ লাখ ৬ হাজার টাকা মূল্যের ১২ শতাংশ জমি, ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ জমি এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা মূল্যের ২ শতাংশ জমি রয়েছে। এছাড়া তার নিজ নামে ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪০ টাকা মূল্যের একটি বিলাশবহুল জিপ গাড়ি, ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যের একটি বিলাশবহুল প্রাইভেট কার রয়েছে। কৃষি ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় আবু জাহির ও তার ভাই আল-আমিনের নামে পৃথক দুটি যৌথ অ্যাকাউন্টে ২৬ লাখ ২১ হাজার ১১৪ টাকা জমা আছে। আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে তার নিজের নামে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি পলিসি আছে।

আবু জাহিরের স্ত্রী আলেয়া আক্তারের নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় রয়েছে ৮২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি, ৬ লাখ ৫০ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি। তার নামে আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৬ টাকা এবং ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৪২ টাকার পৃথক দুটি বিমা পলিসি আছে।

তার ছেলে ইফাত জামিলের নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি, একই মৌজায় ২৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৬২ দশমিক ০৮ শতাংশ জমি, চুনারুঘাটে গাজীপুর মৌজায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ৪২ শতাংশ জমি এবং একই স্থানে ২ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ জমি আছে। তার নামে একটি বিও অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩ টাকার এবং ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩০১ টাকার পৃথক দুটি পলিসি রয়েছে।

আবু জাহিরের মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি, পূবালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬২ টাকা, একটি বিও অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৩ টাকা রয়েছে।

তার ভাই বদরুল আলমের নামে শায়েস্তাগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের অলিপুরে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমি, ওই স্থানে তার আরও ১১ শতাংশ জমি রয়েছে, যার মূল্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সেখানে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার ৭২১ টাকায় একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে তার নামে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকার পৃথক ৪টি পলিসি আছে। তার আরেক ভাই আল-আমিনের নামে জনতা ব্যাংকের হবিগঞ্জ শাখায় জমা আছে ২৫ লাখ টাকা।

দুদক ইতোমধ্যে এসব সম্পদ জব্দ করার জন্য হবিগঞ্জের বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করেছে, এবং বিচারক তার জব্দের আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া, আবু জাহিরের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজি এবং সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের মতো অভিযোগ রয়েছে। আরও কিছু সম্পদ তার এবং পরিবারের সদস্যদের নামে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং সেই অনুসন্ধানও চলছে।

এ ঘটনার মাধ্যমে তার সম্পদ বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ এবং অন্য কোনো অবৈধ উপার্জনের তথ্য উদ্ঘাটন করার জন্য দুদক আরও তদন্ত চালাবে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে